আব্দুল আলিম , সাপাহার (নওগাঁ) গত কয়েক দিন ধরেই সকাল সন্ধ্যা শীতের অনুভব জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। রাতে কুয়াশা পড়ে জমতে দেখা গেছে সবুজ ঘাসের উপর। দিনে কিছুটা গরম থাকলেও রাতের শেষভাগে বইছে শীতের হাওয়ায় জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে শীত নামতে দেরি নেই। সপ্তাহ খানেক বাদেই শীত নেমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এই শীতের প্রস্তুতি নিতে ক্রেতাদের আগে থেকেই ভীড় জমাতে শুরু করেছে লেপ তোশকের দোকানগুলোতে।
শীতকে সামনে রেখে প্রতিটি পরিবারেই শীত মোকাবেলায় লেপ তোশকের চাহিদা তৈরি বর্তমানে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা । এছাড়াও শীতের মৌসুমে গ্রাম অঞ্চলে বিয়ের ঘটনা ও বৃদ্ধি পায় । আদি কালের রীতি অনুযায়ী কণের সাথে নতুন লেপ, তোশক, জাজিম, বালিশ, কোল বালিশ সহ নানা ধরনের সামগ্রী উপহার হিসেবে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে এ অঞ্চলে। এমনি সকল ধরনের অর্ডার হাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এই এলাকার কারিগর পেশাজীবীরা।
আসন্ন শীতের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে অনেকেই নতুন করে লেপ-তোশক তৈরি করে নিচ্ছেন। আবার অনেকেই পুরোনো লেপ-তোশক মেরামত করার ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন । আর এমনি সকল কাজে ব্যস্ততায় সময় পার করছেন স্হানীয় সব কারিগরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সাপাহার উপজেলা সদরের সকল কারিগরেরা এখন ব্যস্ততার মধ্যে সময় পার করছেন লেপ তোষক বানাতে । রাস্তার পাশে বসেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মালিক-শ্রমিক সবাই ব্যস্ত ,তুলা, সুই-সুতাসহ লেপ-তোশক তৈরির সামগ্রী নিয়ে।
এবছর ও অন্যান্য বছরে তুলনায় সকল ধরনের তুলার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ,সাদা তুলা, কালো তুলা, কার্পাস তুলা, শিমুল তুলা দিয়ে লেপ তৈরি হওয়ায় বাজারে চাহিদা আছে পাশাপাশি ক্রেতাদের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে তুলার দাম ও মান যাচাই করতে দেখা গেছে। শিমুল তুলার কদর বেশি হওয়ায় এই তুলার তৈরি লেপ-তোশক বেশি তৈরি হচ্ছে তুলনামূলক ভাবে কম । কারণ হিসেবে এই তুলায় তৈরি লেপ তোশকের দাম একটু বেশিই বলে জানান দোকান মালিক ও কারিগররা।
উপজেলা সদরের মেসার্স নাজিম বেডিং ষ্টোর এর প্রোপাইটর মাসুদ রানা জানান , বর্তমানে বাজারে সকল প্রয়োজনীয় জিনিসিপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এর প্রভাব পড়েছে লেপ তোশক তৈরির সামগ্রীর উপর । বর্তমানে শিমুল তুলা প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, কার্পাস তুলা প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা,কালো রাবিশ তুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা , সাদা তুলা ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা এবং আঙ্গুরি তুলা ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে । গত বছরের তুলনায় তুলার দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাপড়ের প্রতি গজে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি লেপ-তোশক তৈরিতে খরচ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে । এবছর মাঝারি ধরনের একটি লেপ বানাতে খরচ হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২৪০০ টাকা, তোষক বানাতে ১৩০০ থেকে ২৫০০ টাকা খরচ হয়। তবে লেপ তোশকের দামের ভিন্নতা হতে পারে তুলার দাম ও প্রকারভেদের কারণে।
উপজেলার বাসুলডাঙ্গা গ্রামের কারিগর রবিউল ইসলাম বলেন, সারা বছরই টুকিটাকি বেচা-কেনা হয়। তবে শীত মৌসুমের শুরু থেকে দোকানে কাজের চাপ বাড়ে। এখন লেপ তোষক তৈরির অর্ডারও বেশি। প্রতিদিনই নতুন নতুন অর্ডার আসছে। তা ছাড়া তৈরি করা লেপ তোশক কিনতেও প্রতিদিন দোকানে আসছেন ক্রেতারা।
তিনি আরও জানান, একটি লেপ বা তোশক তৈরিতে একজন কারিগরের সময় লাগে ১ থেকে দেড় ঘণ্টা। একজন কারিগর দিনে ৬ থেকে ৮ টি লেপ বা তোশক তৈরির কাজ করে থাকেন। আর একটি লেপ-তোশক তৈরি করলে তাদের ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পায় । শীত মৌসুমের শুরুর দিক থেকে কাজের চাপ বেশি হয় । সারা বছরের মন্দাভাব পুষিয়ে নিতে এখন বেশি বেশি কাজ করতে হয়।
শীতের এই আগমনি বার্তায় লেপ তৈরি করতে দোকানে দোকানে দাম ও মান যাচাই করছেন এমন একজন শিহাড়া ইউনিয়নের ক্রেতা আঃ মান্নান তিনি জানান, শীতকে প্রাধান্য দিয়ে আগেই এসেছি লেপ তৈরি করাতে । কারণ শীত বেড়ে গেলে কারিগররা আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়বেন এবং চাহিদাও দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেড়েছে।
রতন বেডিং হাউসে লেপ কিনতে আসা ক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, শীতের শুরু হয়েছে বেশি শীত পড়ার আগেই বাসায় ব্যবহারের জন্য নতুন লেপ-তোষক বানিয়ে নিতে এসেছি। গত বছরের তুলনায় দাম বেশি মনে হচ্ছে। গত বছর যে লেপ ছিল ১২০০ টাকা এবছর একই লেপ ১৫০০ টাকায় কিনতে হলো । শীতে উষ্ণতার জন্য লেপ না হলে চলে না। তাই দাম বেশি হলেও যার প্রয়োজন তাকে কিনতেই হবে ।
কেবলমাত্র শীতের সময় বুঝা যায় শীত বস্ত্রের কদর। পাতলা কাঁথায় যখন শীত নিবারণ হয় না তখন প্রয়োজন হয় উষ্ণ ভারি শীত বস্ত্রের । প্রয়োজন হয়ে যায় লেপের মতো ভারি উষ্ণতার শীত বস্ত্রের। ঠিক তখনই বেড়ে যায় কারিগরদের ব্যস্ততা।
১৭৯ বার পড়া হয়েছে।