আব্দুল আলিম, সাপাহার নওগাঁ প্রতিনিধি: সোনালি হলুদ রঙের আমের মুকুলের মনকাড়া ঘ্রাণ। মৌমাছির দল ঘুরে বেড়ানোর গুনগুন শব্দ , ছোট ছোট পাখিরাও মুকুল থেকে মুকুলে উড়ছে মনের আনন্দে ।
এমনি দৃশ্যের দেখা মিলেছে নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী বরেন্দ্র উপজেলার সকল আম বাগানের গাছে গাছে । আর এমন দৃশ্য যে কাউকেই আকৃষ্ট করবে । আমের বানিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত নওগাঁর সাপাহার উপজেলা বর্তমানে দেশের সর্বত্রই আম উৎপাদনে বিশেষ সুখ্যাতি অর্জন করেছে । বর্তমানে এই উপজেলা থেকে উৎপাদিত আম দেশের অভ্যন্তরে সহ বিদেশেও রপ্তানি করা হয়ে থাকে । প্রতি বছর এই উপজেলা থেকে প্রায় ১.৫ হাজার কোটি টাকার আম বানিজ্য হয়ে থাকে।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শীতের প্রকোপ বেশি থাকায় আম বাগানে মুকুল আসতে তুলনামূলক ভাবে বেশি সময় লেগেছে । বর্তমানে গরমের হাওয়া বইতে শুরু করায় মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে এই উপজেলার আম বাগান । থোকায় থোকায় মুকুল ঝুলে পড়তে দেখা গেছে বাগানের আম গাছ গুলোতে।
আম বাগানের সারি সারি গাছে শোভা পাচ্ছে কেবলই মুকুল আর মুকুল । বাতাসে মিশে আসে মুকুলের ম ম ঘ্রাণ । আর এই ঘ্রাণ মনকে শিতল করে তোলে প্রকৃতির এসব কিছু মধুমাসের আগমনী বার্তা হিসেবে সকলকেই জানান দিচ্ছে । চলতি মৌসুমে আমের এই মুকুলকে ঘিরে বাগান মালিকদের চোখে ভাসছে সফলতার স্বপ্ন। এই উপজেলায় দেশি আমের পাশাপাশি আম্রুপালি, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি জাতের আম চাষ হচ্ছে । ইতোমধ্যে এসব গাছেও মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে।
সরেজমিনে উপজেলার মানিকুড়া,৷ ওড়নপুর, মসজিদ পাড়া সহ বিভিন্ন এলাকার অনেক বাগানের আম বাগান ঘুরে দেখা গেছে , গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে কেবলই মুকুল আর মুকুল । এ যেন হলুদ আর সবুজের মহা মিলন। মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। চারদিকে ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত পাগল করা ঘ্রাণ। যেদিকে চোখ যায় গাছে গাছে এখন শুধু দৃশ্যমান সোনালী মুকুলের আভা । মুকুলের ভারে নুয়ে পড়ার উপক্রম প্রতিটি গাছ । মৌমাছিরাও আসতে শুরু করেছে মধু আহরণে । শীতের জড়তা কাটিয়ে কোকিলের সেই সুমধুর কুহুতানে মাতাল করেছে প্রকৃতিকে।
উপজেলার মদন শিং গ্রামের আমচাষী কোরবান আলী জানান, গরমের পড়ার কারণে সব গাছেই মুকুল দেখা দিয়েছে তাই গাছের পরিচর্যা করছি যাতে করে মুকুলের গোড়া শক্ত হয় । এবার পোকার আক্রমণ কম থাকায় কাঙ্ক্ষিত ফলনের আশা করছি । আবহাওয়া ভালো থাকলে আমের বাম্পার ফলন হবে এমনটাই মনে করছেন তিনি ।
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মনিরুজ্জামান টকি জানান, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত অধিকাংশ গাছে মুকুল দেখা গেছে , দিন কয়েক বাদেই পরিপূর্ণ ভাবে মুকুল দেখা যাবে বলে তিনি মনে করেন। এ বছর আমচাষিরা অনেক আগে থেকে গাছের পরিচর্যা শুরু করেছেন । মুকুল দেরিতে আসায় খরা মোকাবিলায় গাছের গোড়ায় পানি সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আম চাষীদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও আম চাষীদের সকল প্রকার পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য গত বছর এই উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে এবার ও নতুন বাগান তৈরি হয়েছে । আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় এই বছরে উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে । অধিক ফলনের লক্ষ্যে আম গাছে উকুন নাশক এভোমেট্রিন ও ছত্রাক নাশক মেনকোজেভ বালাইনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে । অন্যান্য বছরের ন্যায় চলতি বছরেও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে আম রপ্তানি করা যাবে বলে করছেন আম চাষে সংশ্লিষ্টরা।