ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) সারা দেশে সম্প্রচার বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
পাইরেসি পে চ্যানেল বন্ধ ও বিটিভিকে ম্যাজিস্ট্রেসি পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি।
আইএসপি ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার এ সংগঠন আগামী সোমবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তাদের সেবা বন্ধ করে ধর্মঘট পালন করবে বলে জানিয়েছে।
কোয়াবের পক্ষে এ ঘোষণা দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোশারফ আলী চঞ্চল।
শনিবার (৯ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে কেবল টেলিভিশন ব্যবসার বর্তমান সমাধানের লক্ষ্যে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনা এ ঘোষণা দেন তিনি।
চঞ্চল বলেন, কেবল অপারেটরদের দুঃখ-দুর্দশা এবং দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আগামী ১১ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত প্রতীকী ধর্মঘট হিসেবে কেবল টিভি সার্ভিস বন্ধ রাখতে যাচ্ছি।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, কেবল অপারেটররা যেন আইএসপি বিজনেস করতে না পারে সেজন্য কালো আইন করা হয়েছে; কিন্তু আইএসপি ব্যবসায়ীরা টিভি (আইপি টিভি) চালাতে পারবে না এমন কোনো আইন করা হয় নাই। এক দেশে কী দুই আইন থাকতে পারে?
তিনি বলেন, ইন্টারনেট প্রোভাইডাররা সাবস্ক্রিবশন ফি পায়। কিন্তু তারা তাদের ইন্টারনেট লাইন নেওয়ার জন্য ফ্রিতে বিভিন্ন প্যাকেজ দিয়ে দিচ্ছে। যার মধ্যে নাটক, সিনেমা, মাঝেমধ্যে অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট এবং সবগুলো চ্যানেল দেখা যাচ্ছে। সেই চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনসহ প্রচার করছে; এতে করে দেশের আইন ভঙ্গ হচ্ছে।
আজকে পাইরেসির মাধ্যমে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারা (আইএসপি) এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের নাম দিয়ে অনেক অননুমোদিত অ্যাপস আমাদের দেশে চলছে। যেটা কখনোই কাম্য নয়। আমরা লোকাল অপারেটররা নিয়মতান্ত্রিকভাবে পে চ্যানেলগুলো নিয়ে ব্যবসা করছি। কিন্তু সেই একই পে চ্যানেলগুলো অ্যাপসের মাধ্যমে প্রতিটা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে আইএসপি এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো। তারা কোনো লাইসেন্স না নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসা করছে। ফলে আমাদের দেশীয় চ্যানেলগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। তারা যদি নিয়ম-নীতি মেনে ব্যবসা করে তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারা পাইরেসি করে ব্যবসা করছে। এতে করে কেবল ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই আমরা এই প্রতীকী ধর্মঘট করতে যাচ্ছি।
কোয়াবের সভাপতি এ বি এম সাইফুল হোসেন সোহেল বলেন, বিদেশি পে চ্যানেল পাইরেসির মাধ্যমে চলবে সে ব্যাপারে সরকারের কোনো ভূমিকা থাকবে না এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট, বৈধভাবে যদি টেকনোলজি সাপোর্ট করে তাহলে বৈধভাবে সকলেই যেকোনো ব্যবসা করতে পারে। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। ইন্টারনেট প্রোভাইডাররা যদি মনে করে তারা টিভির সার্ভিস দেবে, দিতেই পারে। এতে আমাদের কোনো বিরোধিতা নেই। কিন্তু সেটা হতে হবে বৈধভাবে।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কোয়াবের সিনিয়র সহ সভাপতি নিজামুদ্দিন মাসুদ, সহ-সভাপতি রাশেদ মালিক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল মামুন প্রমুখ।
এসময় কেবল অপারেটরদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা। তাদের দাবিগুলো হলো:
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারা আইপি বেজড ভিডিও প্রোগ্ৰাম, অনলাইন টিভি প্লাটফর্ম এ এফটিপি, নিক্স, বিডিএক্সসহ অন্যান্য সার্ভারের মাধ্যমে কেবল টিভির দেশি-বিদেশি পে-চ্যানেল প্রচার করে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে তা অতিদ্রুত বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ এবং কেবল অপারেটরদের বৈধভাবে ইন্টারনেট ব্যবসা পরিচালনায় বাধা দূরীকরণে কালো আইন বাতিলকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; ওটিটি বা আইপিটিভি প্ল্যাটফর্মে লিনিয়ার টিভি চ্যানেল প্রচার বন্ধকরণসহ যেন বিনামূল্যে প্রচারিত না হয় সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ; নাতিমালা ও বিধিমালার আলোকে অতি দ্রুততার সাথে কেবল টিভি ডিজিটালাইজেশন বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ; কেবল টিভি ব্যবসার শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পূর্বের নিয়মে কেবল টিভি খাতে বিবিধ অভিযোগ/অনিয়ম দ্রুত সমাধান কল্পে ও উক্ত খাত হতে সরকারের রাজস্ব আহরণে বাংলাদেশ টেলিভিশনকে এককভাবে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।