
সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গড়ে উঠেছে নিউ মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠানে চলছে ব্যবসা। নিয়ম অনুযায়ী সরকারি হাসপাতাল থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা থাকলেও, সেটি মানা হয়নি।
সরকারি হাসপাতালের ভেতর-বাহিরে অবস্থানরত দালালরা রোগীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এসব অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এ কাজে হাসপাতালের কিছু কর্মচারীও সহযোগিতা করে কমিশন পাচ্ছেন।
খোদ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চোখের সামনে দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কার্যক্রম চললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাসোহারা পাওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতাল গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রোগী ভাগাভাগির প্রতিযোগিতা চলে। বিভিন্ন অফার দেখিয়ে রোগীদের আকৃষ্ট করা হয়। অনেক সময় অযথা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নাম করে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর এক ভুক্তভোগী নারী (জয়নব বেগম) নিউ মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট ডাক্তারকে দেখালে তিনি সেটি ভুয়া বলে মন্তব্য করেন এবং অনুমোদিত ল্যাব থেকে পুনরায় পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। টাকা ফেরত চাইতে গেলে ওই রোগী দালালদের হাতে অপমানিত হয়ে ফিরে আসেন।
নিউ মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধন নেই বলে সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানা গেছে। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত দালাল চক্রের তালিকায় আছেন—জুয়েল, শহীদ, মিলন, ইমন, বাপ্পি, বাবলু, রঞ্জিত, আকাশ, মাসুম, কামালসহ আরও অনেকে। অভিযোগ রয়েছে, এই দালালদের নিয়ন্ত্রণ করছেন পুলিশ সদস্য শুভাশীষ দাস, যার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। এমনকি হাসপাতালের পুলিশ বক্স ও আনসার ক্যাম্পেও মাসোহারা পৌঁছায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক হাবিবুর রহমান সায়েম অবশ্য দাবি করেন, তাদের রিপোর্ট সঠিক। তবে ওসমানীর অনেক চিকিৎসক এসব রিপোর্টকে অবিশ্বস্ত বলে উল্লেখ করেছেন।
এ অবস্থায় রোগীদের নিরাপদ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।