কানাইঘাট(সিলেট)প্রতিনিধিঃ কানাইঘাট উপজেলার গাছবাড়ী বাজার স্ট্যান্ডে সিএনজি অটোরিক্সা ড্রাইভার আলমগীর হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যা মামলার প্রধান আসামী সাদিক ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন স্থানীয় জনতা ও অটোরিক্সা শ্রমিকগণ। বর্বর এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে অটোরিক্সা শ্রমিকদের সাথে গণসমাবেশ ও গণমিছিল করে এলাকাবাসী ও কানাইঘাট উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ।গাছবাড়ী বাজার সিএনজি অটোরিক্সা স্ট্যান্ডে। এই সমাবেশে কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার বিক্ষুদ্ধ জনতা ব্যানার সহকারে যোগদান করে।
গণসমাবেশ শেষে বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার জনতা একটি মিছিল বের করে যা গাছবাড়ীর বাজারের বিভিন্ন গলি প্রদক্ষিণ করে।এই মিছিলে নেতৃত্ব দেন লোকমান উদ্দিন চেয়ারম্যান ও আবু বকর চেয়ারম্যান। গণসমাবেশ পরবর্তী এই গণমিছিলে কয়েক হাজার জনতা যোগদেন। কুখ্যাত খুনি সাদিক-কয়েস ও তাদের সহযোগীদের ফাঁসির দাবিতে গাছবাড়ী এলাকা শ্লোগানে প্রকম্পিত করে তুলা হয়।বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আলমগীর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে আগামী বুধবার পর্যন্ত পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়। যদি এই সময়ের মধ্যে খুনিদেরকে গ্রেফতার করা না হয়, তাহলে আগামী বৃহস্পতিবার কানাইঘাট উপজেলায় সর্বাত্মক র্ধম পালন করা হবে। পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচী পালন করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।গণমিছিল পরবর্তী গণসমাবেশ থেকে এই কর্মসূচী ঘোষণা করেন সিলেট জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল আহমদ।
তিনি বলেন-বুধবারের মধ্যে হত্যা মামলার আসামীদেরকে গ্রেফতার করা না হলে বৃহঃবার সকাল ৬:০০ টা পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করবে।এই পরিবহন ধর্মঘট অনির্দষ্টকালের জন্য।তবে রোগী বহনের জন্য গাড়ি পরিবহন ধর্মঘটের আওতামুক্ত থাকবে। এরপরও আসামীরা গ্রেফতার না হলে পরবর্তীতে পুরো সিলেট জেলায় পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হবে তিনি জানান।
শ্রমিক নেতা ইকবাল আরো জানান-নিহত আলমগীরের পরিবারকে তারা অর্থনৈতিকভাবেও সহযোগিতা করবেন। গণমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশে গাছবাড়ী এলাকার এবং কানাইঘাট উপজেলার সর্বস্তুরের জনগণের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি অনুরোধ করেন, এই সহযোগিতা যেন গাছবাড়ী এলাকাবাসী অব্যাহত রাখেন।
অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি হাজী আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে মেম্বার সুলেমান আহমদের সঞ্চালনায় গণমিছিল পরবর্তী সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এই শ্রমিক সংগঠনের সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিন।শ্রমিকদের এই সমাবেশ ও আলমগীর হত্যার প্রতিবাদে দেওয়া কর্মসূচীর প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন, দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন-ঝিংগাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বকর-গাছবাড়ী কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক শামীম আহমদ ও মাওলানা ফিরোজ বখত-আওয়ামী লীগ নেতা সায়েম আহমদ- কানাইঘাট বাজার শাখার সভাপতি জুনেদ হাসান জিবান, উপস্থিত ছিলেন ৭০৭ গাছবাড়ী শাখার সাবেক সভাপরি মঈনুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনিম খান,আহবায়ক কমিটির সদস্য এখলাছ উদ্দিন,আবুল মুতলিব,সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির, সাবেক সহ সভাপতি মানিক আহমদ,শ্রমিক সংগঠনের সিনিয়র নেতা আলমগীর, নাদিম আহমদ, আব্দুল খালিদ, শামীম আহমদ,কামরুল ইসলাম,নিজাম উদ্দিন,আলম, পারভেজ, মাসুক, সেলিম,হাবিবুর রহমান,সাহেদ,আম্বিয়া, খছরুজ্জামান,বিলাল, বৃহত্তর কানাইঘাটের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ১৩২৬ শাখা,২০৯৭ শাখা,১৪১৮শাখা,২১৫৯শাখা সহ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কানাইঘাটের বিশিষ্ট ছাত্রনেতা মীম সালমান, গাছবাড়ী এলাকার বিশিষ্ট যুবনেতা এবং নারাইনপুরের বাসিন্দা নুর আহমদ,গাছবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বুরহান উদ্দিন প্রমুখ। গত বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি)রাত ৮:১৫ টায় গাছবাড়ী বাজারে পল্লীবিদ্যুৎ মোড়ে অবস্থিত সিএনজি স্ট্যান্ডে ড্রাইভার আলমগীর হোসেনকে বখাটে সাদিক ও তার সহযোগীরা কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার সময় আশপাশ থেকে লোকজন এগিয়ে আসতে দেখে ঘাতকরা মোটরসাইকেল রেখেই পালিয়ে গেলে উত্তেজিত জনতা তাদের মোটরসাইকেলটি পুড়িয়ে দেয়।
ঘটনার পর আলমগীরের ছোট ভাই সালমান আহমদ বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজহারভুক্ত আসামিরা হলো আকুনি গ্রামের শাহাব উদ্দিনের ছেলে সাদিক আহমদ ও কয়েছ আহমদ একই গ্রামের হাফিজ কুতুব উদ্দিনের ছেলে সুলতান ও লামারতালুক গ্রামের মাহফুজ আহমদ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ২-৩ জন। এ ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার হলেও মূল আসামিরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।অটোরিক্সা চালক আলমগীর হোসেনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার পর বুধবার রাত ৯টা থেকে ১৪ ঘন্টার পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হয়। বিক্ষোভ করে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয় আসামীদের গ্রেফতার করার জন্য। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে মূল আসামীরা গ্রেফতার না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা ও শ্রমিকগণ।