সিলেটের সীমান্ত যেনো চোরাকারবারিদের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই সিলেটের কোন না কোন সীমান্তে জব্দ করা হচ্ছে কোটি টাকার চোরাচালান। বাংলাদেশ থেকেও যাচ্ছে বিভিন্ন পণ্য। মাঝেমধ্যে ধরা পড়ছে চোরাকারবারে সাথে জড়িতরা। এতো কিছুর পরেও থামানো যাচ্ছেনা চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য। ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে মূলহোতারা। সচেতন মহল বলছে, চোরাকারবারে অধিক মুনাফা হওয়ায় বিশাল বিশাল চালান জব্দের পরও এ পথ ছাড়ছে না সিন্ডিকেট।
ভারত থেকে এসব পণ্য চোরাই – পথে বাংলাদেশে আসায় একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, অন্যদিকে সীমান্তে বাড়ছে অপরাধ। আর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বলছে সীমান্তে তৎপরতা বাড়ানোর ফলে চোরাচালান জব্দের পরিমাণ বেড়েছে। সিলেট বিভাগে চারটি জেলার সাথেই রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সীমান্ত। এসব সীমান্তে রয়েছে দুর্গম
এলাকাও।
এর সুযোগ নিয়ে এসব সীমান্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চোরাকারবারিরা। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর বিয়ানিবাজার, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর ও চুনারুঘাট, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, জুড়ি, বড়লেখা, কমলগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ জেলায় তাহিরপুর, বিশ্বরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক সীমান্ত যেন ভারত থেকে-* শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে পণ্য আনার নিরাপদ রুট। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে চিনি, পেয়াজ, রসুন, মসলা, শাড়ি-কাপড় থেকে শুরু করে সবধরনের ফল।
গত ১ বছরে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে প্রায় ৬শত কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বিজিবি। যা এর আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চোরাই পণ্যের সাথে মাঝেমধ্যে ধরা পড়ছে চোরাকারবারিরা। তবে আইনের ফাঁকফুকোরে কিছুদিনের মধ্যেই মুক্তি হয়ে আবারও জরাচ্ছে চোরাকারবারে। ফলে ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে যাচ্ছে মূলহোতারা। এছাড়া ভারতে পণ্যে দাম বাংলাদেশের তুলনায় দাম হওয়া অধিক মুনাফার লক্ষ্যে সীমান্তের মানুষ চোরাচালানে লিপ্ত হচ্ছে। তবে তার সবাই কারো না কারো জন্যে কাজ করে।
শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আশরাফুর রহমান জানান, সীমান্তে বসবাস করা মানুষের দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে একটি চক্র এসব কাজ করাচ্ছে। এছাড়া সংশ্লিষ্টদেরও সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। ভারত থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে এসব পণ্য বাংলাদেশে আসায় সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। অন্যদিকে সীমান্তে অপরাধ।’ চোরাচালান বন্ধে সীমান্তের মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরামর্শ তার।
সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবি বলছে, সীমান্তে টহল, জনবল, তৎপরতা বাড়ানোর কারণে বেড়েছে পণ্যে জব্দের পরিমাণ। বিজিবির উপ মহাপরিচালক কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, বিজিবিএম জানান, দুর্গম এলাকায় প্রতিকূলতার কারণে অনেক সময় পণ্যের সাথে চোরাকারবারিদের আটক করা যায় না। চোরাকারবারিদের নিরুৎসাহিত করতে সীমান্তে প্রচারণাও চালানো হচ্ছে বলে জানানো হয়। ভারতের সাথে সিলেটের সীমান্ত দিয়ে পণ্য আনা নেওয়া সহজ হওয়ার চোরাকারবারিরা এ রুটকে বেছে। নিয়েছে। যে যে রুটে পণ্য আসে সেসব জায়গা চিহ্নিত করে চোরাচালান বন্ধে কাজ করছে বিজিবি।
সূত্র- জাতীয় সাপ্তাহিক আয়না