ঢাকারবিবার , ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সিলেটে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান নেতৃবৃন্দের সাথে জামায়াতের মতবিনিময়

rising sylhet
rising sylhet
ডিসেম্বর ২২, ২০২৪ ৫:০২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আমরা সাফ বলেছি-আমরা মেজরিটি-মাইনোরিটি মানি না বলেছেন,বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান ।

এদেশের যারা নাগরিক তারা সবাই সমমর্যাদাবান গর্বিত নাগরিক। ছোট্ট একটা দেশ, এত ভাগ কিসের আবার। জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই এক। কারণ দেশ বাঁচলে আমিও বাঁচব, সবাই বাচবে। অশান্তি হলে সবাইকে তা ভোগ করতে হবে। আমরা একটা শান্তিপূর্ণ মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।

তিনি শনিবার রাতে সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। নগরীর জিন্দাবাজারস্থ একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সিলেটের হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শীর্ষ স্থানীয় ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, জামায়াতই একমাত্র সংগঠন যারা নিজেদের সদস্যদের মাসিক চাঁদায় চলে। আমরা সব সম্প্রদায়ের মানুষ জাতীয় স্বার্থে এক হয়ে কাজ করবো, শান্তির বাংলাদেশ গড়বো। আমরা কোনো দায়িত্ব পেলে মালিক হিসেবে নয়, পাহারাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবো। আমাদের নেতাকর্মীদের আগে যে সম্পদ থাকবে, নির্বাচনের পরেও সমান থাকবে। নিজের দিকে না তাকিয়ে জনগণের দিকে তাকাতে হবে। আমাদের কর্মীদের স্পষ্ট বলা হয়েছে, কারও সম্পদের দিকে তাকানো যাবে না। যদি এরকম কোনো ঘটনা ঘটে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাঃ শফিকুর রহমান আরো বলেন, বিগত সরকারের আমলে জামায়াত ইসলামী সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। বিগত ১৩ বছর সারাদেশে আমাদের অফিস সিলগালা ছিল। আমাদের দলকে নির্বাচন কমিশন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। আমাদের প্রতীক ও নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই চাপ আর কোনো দল পায়নি। ৫ আগস্টের আগে দেশে দখলদারি-চাঁদাবাজি হয়েছে। এখনো হচ্ছে। শুধু ফ্ল্যাগ বদল হয়েছে; ডান হাত থেকে বাম হাতে গেছে। স্বাধীনতার পর থেকে সবধর্মের মানুষকে সরকারি দলের বাড়াবাড়ির শিকার হতে হয়েছে। একসময় দেশে ইসলাম ছাড়া যে পরিমাণ ভিন্ন ধর্মের মানুষ ছিলেন, সেই হার এখন আর নেই। ইসলাম ছাড়া ভিন্ন ধর্মের মানুষের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ভিন্ন ধর্মের মানুষ কমে যাওয়ার দুটি কারণ রয়েছে। এরমধ্যে একটি হলো যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা সম্মানের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। অন্যটি হলো হয়তোবা জন্মের হারে তারা পিছিয়ে রয়েছেন। স্বাধীনতার পরে কোনো সরকারের আমলে বাড়াবাড়ি কোথাও থামেনি। সেই বাড়াবাড়ির শিকার সুনির্দিষ্ট কোনো ধর্মের মানুষ হয়নি। সবধর্মের মানুষকে এই বাড়াবাড়ির শিকার হতে হয়েছে।

আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, বিগত সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সম্প্রদায়, পক্ষ বিপক্ষ উপস্থাপন করে নিজ নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে আমরা বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চাই। সংখ্যালঘু নির্যাতন ঘটনা অধিকাংশ ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার। কিছু ঘটনা ঘটেছে রাজনৈতিক কারণে, তবে তাও আমরা সাপোর্ট করি না। আইনের ভিত্তিতে সবাইকে চলা উচিত। মানুষ মানুষের জন্য। মানুষ মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করবে কোনো ধর্ম হিসেবে কাউকে বিবেচনা করা উচিত না। আমরা প্রাইমারি থেকে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পর্যন্ত হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ পাশাপাশি বেঞ্চে বসি। যুগ যুগ ধরে আমরা এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের মানুষের সামাজিক অনুষ্ঠানে যাই। কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনায় ঐ জড়িতই দায়ী, ধর্ম দায়ী না।

তিনি আরো বলেন, শেখ মুজিব রহমান ১৯৭২ সালে বললেন, এ দেশে যারা থাকবেন তাদের বাঙালি হয়েই থাকতে হবে। এটার পরেই পাহাড়ে যে ঝামেলাটা শুরু হলো এখনো রয়েছে। ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় না। আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখবো। এ দেশকে গড়ে তুলতে সবার অবদান রয়েছে। মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। একজন নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর তার সম্পদ কমবে আমরা এমন বাংলাদেশ চাই। রাজনীতিকে অনেকে ব্যবসা বানিয়েছে। আগস্টের পর চাঁদাবাজি ও মামলা বানিজ্যের শুধু ফ্লাগ পরিবর্তন হয়েছে। আমরা বিগত সরকারের আমলে সবচেয়ে নির্যাতিত হয়েছি। আমাদের দলের নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছিল, নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আমাদের ওপর সবচেয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল। ৫ তারিখ আমরা সব নেতাকর্মীকে সবধর্মের প্রতিষ্ঠান পাহারা দিতে বলেছি। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে আসতেছি। দুর্গাপূজার সময় আমরা সহযোগিতা করেছি। এখন অনেকে চাঁদাবাজি করে দখলবাজি করে। আমরা কারো সম্পদের দিকে হাত বাড়াতে না করেছি। যেসমস্ত দাবি দাওয়া আপনারা করেছেন তা দেখবো এবং সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে এব্যাপারে কথা বলবো।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে, মহানগর সেক্রেটারী মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন- সিলেট রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজী মহারাজ, সিলেট বৌদ্ধ বিহারধ্যক্ষ শ্রীমৎ সংঘ্যানন্দ মহাথের, সিলেট প্রেসবিটারিয়ান মিশনমন্ডলীর সভাপতি ডিকন নিঝুম সাংমা, সিলেট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোপীকা শ্যাম পূরকায়স্থ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মলয় পুরকায়স্থ, সিলেট জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক রজত কান্তি ভট্টাচার্য, সিলেট মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রদীপ দেবসহ প্রমুখ।

সভায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা বলেন, ৫ আগস্টের পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। জামায়াত নেতৃবৃন্দ আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন। ইসলাম ধর্মে বাজে লোকদের জায়গা নেই। আমরা ধর্মীয়ভাবে সহনশীল হবো, রাজনৈতিক বিষয় রাজনীতিবিদরা বুঝবেন। বিগত সরকারের আমলে আমাদের কিছু দাবি-দাওয়া ছিল তারা তা মেনে নেয়নি। সংখ্যালঘুদের কোনো ফাউন্ডেশন দেওয়া হচ্ছে না। কল্যাণ ট্রাস্ট করে রেখেছে। সংখ্যালঘুরা নাগরিক অধিকার পাচ্ছে না। দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত। দেবোত্তর সম্পত্তিরসহ আমাদের ৮টি দাবি বর্তমান সরকারকে মেনে নেয়ার জন্য জামায়াত আমীরের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।

৫২ বার পড়া হয়েছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।