ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সীমান্তিকের আহমদ আল কবিরে দূর্নীতির খতিয়ান

rising sylhet
rising sylhet
ডিসেম্বর ১২, ২০২৪ ১০:৫১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পেশাদারিত্বের পঁয়তাল্লিশ বছরের ইতিহাসের ত্রিশ বছর তার পরিচিতি ছিল শুধুমাত্র এনজিও সংস্থা সীমান্তিকের চীফ পেট্রোন। আর সর্বশেষ ১৫ বছরে তাঁর নামের আগে লেগেছে অর্থনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষানুরাগী, রাজনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী সহ আরও নানা পদ-পদবি। হয়েছেন অসীম ক্ষমতার মালিকও। লোকে ভাবে তিনি যেখানেই হাত দেন যেন সোনা ফলে। অথচ সেই সোনার ভেতরে কতটা খাদ তা কেউ জানে না। যারা জানে, তারা সবাই সুবিধাভোগী অথবা তলপিবাহক। এমনই এক মুখোশধারি ভূয়া কথিত অর্থনীতিবিদের নাম ড. আহমদ আল কবির। যার সবই আছে শুধু একটা জিনিস নাই সেটা হচ্ছে ‘এমপি পরিচয়’। তাই, নামের পেছনে ‘এমপি’ লাগাতে বিগত নির্বাচনে সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে স্বতন্ত্র থেকে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হয়েছিলেন। খরচ করছেন অবৈধ পথে কামানো কোটি কোটি টাকাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলের মনোনয়ন না পাওয়া আর বিশেষ বাহিনীর হুমকির কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান আহমদ আল কবির।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনিয়ম-দুর্নীতি আর দুই মন্ত্রী ভাগ্নি জামাই পরিচয়ের প্রভাব দেখিয়ে মাত্র ১৫ বছরে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন সিলেটের আলোচিত এনজিও ব্যক্তি ড. আহমদ আল কবির। তবে কি ভাবে তিনি এতো অর্সথম্পত্তির মালিক হয়েছেন এ নিয়ে রয়েছে নানা কৌতুহল। একটাই প্রশ্ন তার সম্পত্তির উৎস্য কোথায়? মাত্র ১৫ বছর আগেও সিলেট শহরে তার বাসার জায়গা ছাড়া খুব বেশি স্থাবর সম্পত্তি ছিল না। আর এই কয়েক বছরে তিনি ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ – অঢেল সম্পত্তির মালিক। হয়েছেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাও। নামে-বেনামে করেছেন আরও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের তলপিবাহক হিসেবে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। দুই মেয়াদে টানা দীর্ঘ ৬ বছর তিনি রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন। পারিবারিক ভাবে অসচ্ছল ছিলেন না ড. আহমদ আল কবির। তবে হঠাৎ করে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ার প্রধান সিঁড়ী ছিল ‘রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান’ পরিচয় এবং রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া নাকি সীমান্তিকের প্রেেজক্ট আত্মসাৎ এমন প্রশ্ন সবার মাঝে। তবে সূত্র বলছে সীমান্তিকের একটি শাখা হয়ে বিনোদিনি ক্লিনিক যার ব্যয় বার বহন করে সিটি করপোরেশন। সেই বিনোদিনি ক্লিনিক দিয়েও কবির কয়েক শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে ‘রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান’ হওয়ার পরে ব্যাংকটির একক অধিপতি হয়ে ওঠেন ড. আহমদ আল কবির। ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মী থেকে উচ্চপদস্থ শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগ হয় তার হাত ধরেই। পুর্ণাঙ্গ সরকারি এই চাকরির জন্য জনপ্রতি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা করে ঘুষ নেন তিনি। এছাড়াও ছিল, ব্যাংক ঋণ বাণিজ্য। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার মাধ্যমে একেক প্রতিষ্ঠানকে হাজার কোটি টাকার লোন দিয়েছেন তিনি। এতে করে নিজে হয়েছেন অঢেল অর্থবিত্তের মালিক, আর সরকারি এই ব্যাংকটিকে নিয়ে গেছেন দেউলিয়ার পথে। এখানেই শেষ নয়, তার রাতারাতি আঙ্গল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়ার পেছনে আরও রয়েছে, করোনা টেস্ট বাণিজ্য, অবৈধ পন্থায় সরকারি জমি লিজ গ্রহন, অবৈধ মানবপাচার ব্যবসাসহ সর্বোপরি ইহুদী রাষ্ট্র ইসরায়েল কানেকশন। ১৩০ শতক জমির বন্দোবস্ত, পরে শর্ত লঙ্ঘন সীমান্তিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নামে সিলেট নগরীর অকৃষি খাতের ৯৭ শতক জায়গা নামমাত্র মূল্যে বন্দোবস্ত নিয়েছেন ২০১২ সালে। একই ভাবে ৩৩ শতক জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে ‘আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষা ও মানবসম্পদ কেন্দ্রের’ নামে। অকৃষি খাতের জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দেওয়া হয় ২০১০ সালে। মোট ১৩০ শতক জমির বন্দোবস্তের শর্ত হিসেবে সম্পাদিত দলিলে উল্লেখ রয়েছে, জমি যে উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে সেই উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। বন্দোবস্তের জায়গায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সীমান্তিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নামে যে জমি বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে আহমদ আল কবিরের নামে কমপ্লেক্স, সীমান্তিক এনজিও অফিস, সীমান্তিক হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সীমান্তিক নার্সিং কলেজ, সীমান্তিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, সীমান্তিক শিক্ষা উন্নয়ন কেন্দ্র, সীমান্তিক আইডিয়াল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ রয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তিক মহিলা ডিগ্রি কলেজ, সীমান্তিক আইডিয়াল ¯স্কুল নামে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে। অন্যদিকে নগরীর পূর্ব শাহী ঈদগাহ এলাকার বন্দোবস্ত নেওয়া সরকারি ভুমিতে আট তলাবিশিষ্ট ভবন করা হয়েছে। সেই ভবনে আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষা ও মানবসম্পদ কেন্দ্রের পাশাপাশি আহমদ আল কবিরের নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, আরটিএম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মা ও শিশুস্বাস্থ্য ক্লিনিক, সিলেট সদর উপজেলা ডায়াবেটিক সমিতি, আরটিএম নার্সিং কলেজ, আরটিএম ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড পুনর্বাসন কেন্দ্র, আরটিএমআই ম্যাটস ও আইএইচটি নামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি একটি ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ওই ভবনে। এতে করে দুই জায়গা বন্দোবস্ত নেওয়ার শর্ত লঙ্ঘন হয়েছে।

 

সীমান্তিক নিয়ে জোচ্চুরি : সীমান্তিক নামের এনজিওর কার্যক্রম নিয়েও জোচ্চুরির অভিযোগ রয়েছে। ১৯৭৯ সালে এনজিওটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সিলেটের কানাইঘাটের বাসিন্দা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব প্রয়াত হারিছ চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। এনজিওতে প্রায় দুই হাজার লোকবল কর্মরত। চারটি স্কুল ও কলেজ এবং সিলেট শহর ও সিলেট বিভাগের ১৩টি উপজেলায় ২০টি ক্লিনিক ও হাসপাতাল রয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। বাস্তবে সিলেট, কানাইঘাট-জকিগঞ্জ উপজেলা ছাড়া এর কার্যক্রম কাগুজে। আর প্রভাব খাটিয়ে সীমান্তিক পরপর চারবার সিলেট বিভাগে ‘শ্রেষ্ঠ এনজিও’ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার অর্জন করে। আহমদ আল কবিরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে সীমান্তিক কমপ্লেক্সে গিয়েও তার সাক্ষাৎ মেলেনি। সীমান্তিকের চেয়ারপারসন শামীম আহমদকেও পাওয়া যায়নি। তাদের দপ্তর থেকে জানানো হয়, রাজনৈতিক কারণে তারা স্বশরীরে হাজির না থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। দুজনের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত ও অফিসের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সূত্র -বাংলার মাটি

১৩৮ বার পড়া হয়েছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।