হাওর অঞ্চলখ্যাত হবিগঞ্জ জেলা। চৈত্রের মধ্যবর্তী সময়ে এখন জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাঠ জুড়ে বইছে সবুজের সমারোহ। বাতাসে দুলছে সবুজ পাতায় মোড়ানো কৃষকের স্বপ্নের সোনার ফসল। চৈত্রের দিপ্তরোধে জমির বাড়তি পরিচর্যায় কৃষক যখন স্বপ্ন দেখছিল সোনালী ধানের, তখনই ম্লান হতে চলছে ক্লান্ত কৃষকের হাসি মাখা মুখ।
হঠাৎ করেই জেলার লাখাই, বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় আবাদকৃত বোরো জমিতে রোপনকৃত ব্রি-২৮ জাতের ধানে দেখা দিয়েছে চিটা। যে কারণে কৃষকদের চোখে মুখে এখন বিরাজ হতাশার চাপ। যদিও হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ব্রি-২৮ জাতের ধানে কিছুটা চিটা দেখা দিলেও অন্যান্য ফসল ভালো রয়েছে। আর জলবায়ুর পরিবর্তণের ফলেই ব্রি-২৮ জাতের ধানে এমনটা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বানিয়াচং, লাখাই ও আজমিরীগঞ্জসহ ভাটি অঞ্চলের নিম্ন এলাকাগুলোতে রোপন করা হয় ব্রি-২৮ জাতের ধান। মূলত আগাম বন্যা থেকে রক্ষার জন্যই এ জাতীয় ধান রোপন করে থাকেন কৃষকেরা। আর মাত্র ক’দিন পরই যখন কৃষকেরা এ ধান গোলায় তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক তার আগ মুহুর্তে ধানের ফুল বের হওয়ার সাথে সাথেই মরে যাচ্ছে চারাগুলো। একই সাথে মরতে শুরু করেছে কৃষকের স্বপ্নও। এমতাবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়ছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। এরমধ্যে বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর, বিথঙ্গল, বিজয়পুর, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা, বিরাট, কাকাইলছেও, আনন্দপুর ও লাখাই উপজেলার স্বজনগ্রামের হাওর, রুহিতনসী হাওর, শিবপুর হাওর, রাজনগর হাওর, আঠারোকাইল্লা হাওর, ও ভোগার হাওরসহ বেশ কিছু হাওরের চিত্র একেবারেই করুণ।
যদিও স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরগুলো বলছে, এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন তারা। দিচ্ছেন নানা পরামর্শ। একই সাথে জলবায়ুর পরিবর্তণের ফলে দিনে অতিরিক্ত গরম ও রাতে ঠান্ডা থাকায় এ জাতীয় ধান এখন চাষাবাদের অনুপোযীও বলছেন তারা। যে কারণে এ ধান চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
কৃষক শাহ রামিম জানান, আমাদের ভাটি এলাকার জমিগুলোতে সবসময় আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকে। যে কারণে ব্রি-২৮ জাতীয় ধান আমরা রোপন করি। এ ধান ফলনে যেমন ভাল তেমনি বৈশাখের শুরুতে কাটাও যায়। মূলত এজন্যই এ ধানে কৃষকদের আগ্রহ বেশি। তবে এবার সেই চিত্র ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে। এতদিন সবকিছু ঠিকটাক থাকলেও গত কয়েকদিনে হাওরের চিত্র ভিন্ন। ব্রি-২৮ ধানে চিটা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, বিষয়টি আমরা জানার পরপরই নাগুড়া ফার্মের ধান গবেষকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাওর অঞ্চল পরিদর্শন করি। মূলত জলবায়ুর পরিবর্তণের ফলেই ব্রি-২৮ জাতের ধানে এমনটা হচ্ছে।
তিনি বলেন, দিনের বেলায় অতিরিক্ত গরম ও রাতের বেলায় ঠান্ডা থাকার কারণে ব্রি-২৮ জাতের ধান এখন চাষের অনুপযোগী। তাই নতুন গবেষনায় ব্রি-৮৮, ব্রি-৮৬, ব্রি-৯৬ আবাদ করলে এমন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তবে ব্রি-২৮ জাতের ধান জেলা কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে সেই হিসেব নেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে।