
বদরপুর ছাড়াও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আরও চারটি গ্রামের হাজারো পরিবার কালনী-কুশিয়ারা নদী ভাঙনের শঙ্কায় দিনরাত পার করছে। এর মধ্যে শতাধিক পরিবার কাকাইলছেও ইউনিয়নের।
কালনী-কুশিয়ারা নদীর ভাঙন প্রতিদিন বাড়ছে। কাকাইলছেও ইউনিয়নের মনিপুর, সৌলরী, কালনীপাড়ার কয়েকটি বসতঘর যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে বিপাকে পড়েছেন অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষগুলো। ভাঙনকবলিত অনেকে আত্মীয়-স্বজন ও সরকারি পতিত জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন।
সৌলরী গ্রামের নদী ভাঙন কবলিত রেখা রানি সূত্রধর, বিষকা রানি সূত্রধর ও নিরা মনি সূত্রধর জানান, তারা দুই বছর ধরে নদী ভাঙনের কবলে পড়েছেন। একটু একটু করে পুরোটা বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
ছায়া রানি সূত্রধর বলেন, আমাদের অনেক বড় বাড়ি ছিল। দুই বছর ধরে নদী আমাদের বাড়ি ভেঙে শেষ করে দিয়েছে। গত কয়েক দিনে শেষ সম্বলটুকু নদী গিলে খেয়েছে। এখন আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
বদরপুর গ্রামে কালা রবিদাস বলেন, দুই বছর ধরে নদী আমাদের ভিটেমাটি, ফসলের জমি ভাঙতেছে। ভাঙতে ভাঙতে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। কার বাড়িতে গিয়ে উঠব ভেবে পাচ্ছি না।
গত এক মাসে সামরিক মিয়ার বাড়ির মতো নদীগর্ভে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছেন বদরপুর গ্রামের সুজিত, অবিনাশ, অধীর, অশ্বীনি, দীপঙ্কর, মনোরঞ্জন, অরিবৃন্দ, নীলকান্ত, মতিন্ড, যামিনী, রমাকান্ত, গৌতম, সুশেন, লবু ও ভূষেনসহ অন্তত ৩০ জনের পরিবার।
এদিকে ২০২১ সালে কুশিয়ারা নদীর ভাঙন থেকে সৌলরী গ্রাম রক্ষার জন্য ২০ হাজার বস্তা জিও ব্যাগ (বালু ভর্তি বিশেষ ব্যাগ) ফেলা হয়। ভাঙন রোধের অস্থায়ী এ ব্যবস্থার জন্য সেখানে ৮৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল। বর্তমানে ব্যাগগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সৌলরী গ্রামের মজিবুর রহমান মিয়া ও সামরিক মিয়া বলেন, নদীগর্ভে আমাদের বসতঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জিও ব্যাগগুলোও পড়ে যাচ্ছে। আর কিছুদিন এভাবে থাকলে কয়েকটি গ্রাম নদী গিলে খাবে।
বদরপুর গ্রামের বাসিন্দা শোভা রানি সূত্রধর বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে বাড়িতে বসবাস করছি। গত কয়েক বছরের ভাঙনে ভিটের এক তৃতীয়াংশ বিলীন হয়ে গেছে। এখনও ভাঙছে। এ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক বলেন, নদী ভাঙনের কবলে পড়া গ্রামগুলো পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, একটা ব্যবস্থা হবে।