বিশেষ প্রতিবেদন: সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের আলোচিত নেত্রী, এইচ এম গ্রুপের চেয়ারম্যান, শিল্পপতি হেলেন আহমদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ কোথায়? বিগত সরকারের শাসন আমলে আবাসন কোম্পানীর নামে প্রবাসীদের বাড়িঘর জবর দখল, অত্যাচার, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণির বিস্তর অভিযোগ ছিলো তার বিরুদ্ধে। হেলেন আহমদের মালিকানায় থাকা ‘আহমদ হাউজিং’ শত শত প্রবাসীর কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে হেলেন আহমদের ক্ষমতার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে সিলেট জেলার এয়ারপোর্ট থানাধীন বড়শলা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে এলাকার নিরীহ মানুষকে আতংকে রাখার কৌশল ছিল তার নেশা ও পেশা। মানুষকে অত্যাচার করার জন্য রীতিমত সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেন হেলেন। গুঞ্জন রয়েছে মিছবাউল ইসলাম কয়েস নামের এক ব্যক্তির সাথে বিগত ২০/২৫ বছর ধরে হেলেন আহমদ একই ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছেন। যদিও কয়েছের বিরুদ্ধে হেলেন ছাড়াও কাগজে পত্রে রয়েছে ৪টি বিয়ে এবং একাধিক নারী ধর্ষণের মামলা রয়েছে। সিলেটের এয়ারপোর্ট থানা বড়শলা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে প্রবাসীদের কাছ থেকে মিছবাউল ইসলাম কয়েস ও হেলেনের নির্মম অত্যাচারের সত্যতা পাওয়া গেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে আহমদ হাউজিং এলঅকায় মাটি কাটেতে গিয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে দেন হেলেন ও কয়েছ।
আরও পড়ুন —http://কেমন আছেন আলোচিত নারী হেলেন
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর তান্ডব চালানোর ঘটনায় দক্ষিণ সুরমা থানায় হওয়া একটি হত্যা মামলার ৩৩ নং আসামী হেলেনের কতিত স্বামী এই কয়েস। এছাড়া সিলেট কতোয়ালী থানাতেও কয়েসের বিরুদ্ধে আরো দুটি মামলা রয়েছে দুটি। মামলা নম্বর যথাক্রমে এফআই আর নং ৩৪ এবং জি আর নং ৩৮৯ মামলাটি হয়েছে ২৮ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখে। অপর মামলার জি আর নং ৩৭৭ এফআই আর নম্বর ২২। কতোয়ালী থানায় আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে কয়েসের বিরুদ্ধে।
রাজধানী ঢাকার শাহবাগ থানায় একজন হিন্দু নারী তার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। মামলা নম্বর ২৩। মামলাটি বর্তমানে চলমান। এছাড়া ঢাকার সাভার থানাতেও ধর্ষণসহ একাধিক নারীর সঙ্গে অবৈধভাবে মেলামেশার অভিযোগ দায়ের করা মামলা চলমান বলে জানা গেছে। ঢাকা সাভার সি আর মামলা নং ৯৭১/২০১৫ইং ৪টি বউ থাকার পরও নারী ধর্ষণ তার নেশা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া পরিবেশ আইন লঙ্ঘণ করে টিলাকেটে আবাসন এলাকা বানানোর অপরাধে পরিবেশ আইনে একাধিক মামলা হয় কয়েস-হেলেনের বিরুদ্ধে। পরিবেশ আদালতের মামলা নম্বর ১৯/১১ এবং ৬৮/১১। মামলা দুটিতে কয়েস এবং হেলেন আহমদকে সরাসরি আসামি করা হয়। কয়েস ও হেলেনের বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে সম্প্রতি সিলেটের বড়শলা এলাকায় যান এই প্রতিবেদক।
ভূক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিলেটের বিমানবন্দরের দক্ষিণ পাশে আহমদ হাউজিং কোম্পানির অবস্থান। এই কোম্পানির মালিক ছিল বিতর্কিত আওয়ামী লীগের নারী নেত্রী হেলেন আহমেদের সাবেক স্বামী মৃত মাসুদ আহমেদ রুহেল।
আহমেদ হাউজিং এর মালিক রুহেলের কর্মচারী ছিল এই মিছবাউল ইসলাম কয়েস। দেখতে সুদর্শন হওয়ায় কর্মচারীর প্রেমে পড়ে যান হেলেন। পরে দু’জনের প্রেম পরিণয়ের জন্য রুহেলকে হত্যা করা হয় বলে গুঞ্জন রয়েছে এলাকাতে।
২০০২ সালের ১৯ জুন মাসুদ আহমদ রুহেলের মৃত্যু হয়। স্বামী মাসুদ আহমেদ রুহেলের মৃত্যুর পর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত হেলেনের সঙ্গে এক বাসাতেই (ফরিদাবাদের এইচএন ভবন) থাকতেন মিসবা উল ইসলাম কয়েস। বিতর্কিত হেলেনের সঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন এবং সাবেক প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী ইমরান আহমদের ঘনিষ্টতা থাকায় বেপরোয়াভাবে অন্যায় কাজ করেন কয়েস-হেলেন। হেলেন আহমেদ ছাড়াও আরও চারজন নারীকে কাগজে কলমে বিয়ে করেছেন কয়েস। এর মধ্যে তিন নম্বর স্ত্রী জুবিন বেগমের পারিবারিক আদালতে করা মামলায় হেলেন আহমদকে কয়েসের এক নম্বর স্ত্রী বলে উল্লেখ করেছেন। মামলার ভাষ্য মতে ২০০৪ ইং সালের কোন এক সময় তারা বিয়ে করেন। বিশ^নাথ মামলা নম্বর ১৫/২০১৪ইং। একই মামলাতে কয়েসে’র শামছুন্নাহার নামের আরেকজন স্ত্রী’র অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এরপরও নারীর প্রতি দুর্বল কয়েসের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ধর্ষণের মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে হওয়া কয়েকটি মামলার নথি ঘেটে দেখা গেছে, কাগজে কলমে তার রয়েছে ৪ জন স্ত্রী। এরপরও নারী ধর্ষণের অভিযোগে একাধিক মামলা চলমান তার বিরুদ্ধে।
এতো ঘটনার পরও সিলেট বাসীর কাছে হেলেন এর নামটি ছিলো অজানা। বিগত সরকারের আমলের হঠাৎ করে নামটি বেশ আলোচিত ও সমালোচিত হয়ে উঠে। আওয়ামী সরকারের টানা তিনবারের শাসনামলে তিনি রাতারাতি আলোচনায় উঠে আসেন। সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড.একে আবদুল মোমেনের প্রথম সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে হঠাৎ করে সামনে আসেন হেলেন আহমদ। পাশাপাশি সিলেটে হ্যালির ধুমকেতুর মতো উদয় হন ওই সংসদ সদস্যের স্ত্রী সেলিনা মোমেন। যুক্তরাজ্যের নাগরিক মিসেস হেলেন আহম তখনোও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য। টাকার জোর,অ তি আধুনিক ও সুদর্শণা থাকায় তিনি দ্রুত মন জয় করে নেন সেলিনা মোমেনের। সেইে থেকে সেলিনা মোমেনের বিশ্বস্থ হয়ে উঠেন তিনি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনিই সঙ্গী হয়ে উঠেন সেলিনা মোমেনের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন মোমেন। তখনই খেলা শুরু করেন হেলেন আহমেদ আর সেলিনা মোমেন। সেলিনা মোমেনের বিশ্বস্থ হওয়ার কারণে হেলেনকে কাছে টেনে নেন স্বয়ং পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রীর কল্যাণে অখ্যাত হেলেন আহমদ হয়ে যান বিখ্যাত। পেয়ে বসেন জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান। একই সাথে বাগিয়ে নেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটিও। যদিও পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে ওই কমিটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকালীন সিলেটের সকল মহিলা আওয়ামী লীগার সেলিনা মোমেনকে কাছে পেলেও নির্বাচন পরবর্তী সবাইকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। দলীয় কর্মীদের অভিযোগ, হেলেন আহমদের ইশারায় কাউকেই কাছে বসতে দেননি সেলিনা মোমেন।
আরও পড়ুন — http://সরকারী কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে তারা চালিয়েছেন নানা অপকর্ম
সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে শুরু হয় দুজনের হেলেন-সেলিনার বাণিজ্যিক কমিশন আর ব্যবসায়ী মিশন। সকল সরকারি নিয়োগে আদায় করতেন কমিশন। একই সাথে পদায়ন, পদোন্নতিসহ বদলীর আদেশেও ভাগ পেতেন নির্ধারিত হারে। আওয়ামী লীগ কর্মীদের অভিযোগ, এই সবকিছুর মূলে কলকাঠি নাড়তেন হেলেন আহমদ। তাছাড়া ক্ষমতার বদৌলতে এয়ারপোর্ট রোডস্থ বড়শালায় অনেক প্রবাসীর জমি দখল করে গড়ে তোলেন হাউজিং কোম্পানী। গ্রাস করেন শত শত একর টিলাভূমি। অবশ্য হেলেন আহমদের জায়গা দখলের খবর নতুন কোনো ঘটনা নয়। অবৈধ জায়গা দখলের অভিযোগে ওয়ান ইলিভেনের সময়ে তিনি গ্রেফতার হন যৌথবাহিনীর হাতে। তবুও থেমে ছিল না হেলেনের ভূমি আত্মসাৎ বাণিজ্য। সিলেট প্রেসক্লাবে হেলেন আহমদের হাতে নিজেদের ভুমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগে একাধিক ভুক্তভোগী পৃথক পৃথক এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। আদালতে হেলেন আহমদের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে একাধিক ভুক্তভোগীর। সেলিনা মোমেন পাশে থাকায় গত বছর বড়শালা মৌজাস্থিত টিলা ভূমি দখল করে ফের আলোচনায় উঠে আসেন হেলেন আহমদ। প্রায় ৮৬ শতক টিলা ভুমি দখল করে কৌশলে মোমেন ফাউন্ডেশনের নামে উইল করে দেন ২০ শতক। যার দলিল নং ৫৮০১/২০২১। হেলেন আহমদের এই বে-আইনী কাজের সহযোগী ছিলেন নিজের ব্যবসায়ীক পার্টনার ও কথিত স্বামী মিসবাউল ইসলাম কয়েছ। বেআইনীভাবে শ্রেণী পরিবর্তন করেন হেলেন আহমরে টিলাভূমি দখলের ঘটনা প্রথম জাতীয় একটি পোর্টালে প্রকাশ পেলে শুরু হয় হুলুস্থুল কান্ড। পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবি সমিতি (বেলা) ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করে অবৈধ টিলাভূমিতে মোমেন ফাউন্ডেশনের স্থাপনা নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয়। ওই বছরের ১ মার্চ গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ হলে প্রকাশিত সংবাদের জন্য হেলেন আহমদ ও তাঁর ব্যবসায়ীক পার্টনার কথিত স্বামী মিসবাউল ইসলাম ওই সাংবাদিককে ভয়-ভীতিও হুমকী প্রদর্শন করেন। পরবর্তীতে সেলিনা মোমেনের নির্দেশে ডিবি পুলিশের ডিসি তোফায়েল আহমদ ওই সাংবাদিকের মুঠোফনে কল দিয়ে দেখা করার কথা বলেন। বিষয়টি সাংবাদিক সমাজে জানাজানি হয়ে গেলে সে সময় বিপাকে পড়েন ওই ডিসি। পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সাংবাদিক দেবদ্রত রায় দিপনের উপর চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং ১১৩১/ ২০২৩। এই মামলা আদালতে বিচারাধীন। মামলার পর থেকে সাংবাদিক দীপন মারাত্মক জটিল রোগে আক্রান্ত হন। সরকার বদলের ডাক দিয়ে যখন সাধারণ ছাত্র-জনতা মাঠে অবস্থান করছিলেন। সেই সময় হেলেনের নেতৃত্বে একটি স্বসশ্র ক্যাডার দল নিয়ে মাঠে নামেন ছাত্র জনতাকে প্রতিহত করতে। সে রকম একটি ডিভিও স্যুসাল মিডিয়ায় শুভাপাচ্ছে এখন। সরকার বদলের সাথে সাথে চতুর হেলেন দেশ ছেড়ে পালালেও তার সহযোগী একাধিক মামলার আসামী মিসবাউল ইসলাম কয়েস দেশে অবস্থান করছেন এখনো। এদিয়ে সম্প্রতি সময়ে হেলেনের বিরুদ্ধে দক্ষিন সুরমার বাসিন্দা যুক্তরাজ্য বিএনপির শাখার সভাপতি আব্দুল মালেকের বসত বাড়ি ভাংচুর ও জ্বালাও পোড়ায় ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।