বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে থানায় হামলা চালিয়ে ১৫ পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ ৬ হাজার আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সকালে মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করেছেন এনায়েতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুল্লাহ।
তিনি বলেন,মামলায় চারজনের নাম উল্লেখসহ পাঁচ থেকে ছয় হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
সোমবার (২৬ আগস্ট) এনায়েতপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু বিভিন্ন সময় থানায় অবৈধ ও অনৈতিক সুবিধা দাবি করতেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এক আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। পুলিশ তার দাবি না মেনে ওই আসামির বিরুদ্ধে মামলা নেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে ৪৫০-৫০০ জন অজ্ঞাত দুর্বৃত্তকারী থানা ঘেরাও করে ওসি আব্দুর রাজ্জাকের অপসারণ দাবি করে। তাদের দাবি না মানায় থানা ও পুলিশের ক্ষতি করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতা এনায়েতপুর থানার সামনে অবস্থান নেন।
এ সময় ওসি আব্দুর রাজ্জাক হ্যান্ড মাইকে ছাত্র-জনতাকে বলেন, আপনারা থানার কোনো ক্ষতি করবেন না। এই থানা জনগণের, এই থানা আপনাদের। ওসির এমন কথায় ছাত্র-জনতা চলে যান। এর পরেই আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে এজাহারনামীয় আসামিসহ পাঁচ-ছয় হাজার দুর্বৃত্তকারী দলবদ্ধ হয়ে হাঁসুয়া, দা, লোহার রড, লাঠি, পেট্রল বোমা ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে থানায় হামলা চালায়।
আত্মরক্ষার্থে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে হামলাকারীরা পুলিশের কোয়ার্টার ও ওসির বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন দেখে পুলিশ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে আসামিরা থানা কম্পাউন্ডে ঢুকে পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করতে থাকে। এক পর্যায়ে আসামিরা থানা ভবন ধ্বংস ও জীবিত পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশে থানা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে ইস্যুকৃত অস্ত্রগুলি ও জনসাধারণের জমাকৃত বেসরকারি অস্ত্রগুলি লুট করে। তারপর লুণ্ঠিত অস্ত্র-গুলি এবং আসামিদের সঙ্গে থাকা বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে থানার ভেতরে ও বাইরে থাকা অফিসার ও ফোর্সকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। ওসি আব্দুর রাজ্জাকসহ আতঙ্কিত পুলিশ সদস্যরা স্থানীয় বাবু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নিলে হামলাকারীরা সেখানে গিয়ে তাদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
নামীয় আসামিরা হলেন- এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুল্লুক চাঁন, বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূঁইয়া।
অন্যদিকে বিকেলে সেনাবাহিনীর একটি দল থানা এলাকায় পৌঁছে নিহত পুলিশ সদস্যদের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
মামলার এজাহারে থানার যেসব অস্ত্র লুট ও সম্পদ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তারও তালিকা দেওয়া হয়। সবকিছু মিলিয়ে এনায়েতপুর থানায় ৪ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।