
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:নদী ও পাহাড় বেষ্টিত সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা একসময় ছিল অপার সম্ভাবনার ঠিকানা। কিন্তু এই প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠেছিল অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলনের শক্তিশালী চক্র। বিশেষ করে সুরমা নদীর শাখা চেলা ও পিয়াইন নদী, সংরক্ষিত বনভূমি এবং বিভিন্ন জলাধার থেকে নির্বিচারে বালু ও পাথর উত্তোলন চলে আসছিল। এই অবৈধ কার্যক্রমে সাধারণ মানুষ বারবার ভুক্তভোগী হলেও দীর্ঘদিন কেউই প্রতিবাদ করার সাহস পেত না।
এ অবস্থায় ছাতকের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর মাঠে নামেন। ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহনকালে তিনি অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেন। এরপর থেকে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে একের পর এক অভিযান শুরু হয়। ইউএনও তরিকুলের এই উদ্যোগ ছাতকবাসীর কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয়রা জানান, একসময় ছাতকের নদীপাড় ও আশপাশের এলাকায় ড্রেজার, বাল্কহেড ও স্টিলবডি নৌকার দ্বারা চলছিল নিত্যদিনের অবৈধ উত্তোলন। কোনো প্রতিবাদ করার সাহস ছিল না, কারণ এতে জড়িত ছিল প্রভাবশালী অসাধু চক্র। অভিযোগ জানালেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হতো না। কিন্তু ইউএনও তরিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর অবস্থা বদলে যায়। তার কার্যকর পদক্ষেপের ফলে এখন অবৈধ বালু-পাথর ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত। যে জায়গাগুলো একসময় দিনের পর দিন ড্রেজিংয়ে ব্যস্ত থাকত, এখন সেখানে শান্তি বিরাজ করছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি ২০২৫ থেকে এ পর্যন্ত মো. তরিকুল ইসলাম ছাতকে মোট ২৩২টি মামলা করেছেন। এর মধ্যে বালু-মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর অধীনে ১৫টি মামলায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায়সহ ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এছাড়া অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু-পাথর পরিবহনে ব্যবহৃত কোটি টাকার ড্রেজার, বাল্কহেড ও স্টিলবডি নৌকা জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি মাদক নিয়ন্ত্রণেও তার অভিযান বলিষ্ঠ। ২০২৫ সালের মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী ৬৪টি মামলায় ৬৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন। ফলে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের মধ্যে তার নাম আতঙ্কের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ইউএনও তরিকুল নিয়মিত বাজার মনিটরিং, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এবং সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সাধারণ মানুষের প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। স্থানীয়রা মনে করেন, ইউএনও তরিকুল ইসলাম পরিবেশ ও জনস্বার্থ রক্ষায় যেমন অনড়, অপরাধীদের বিরুদ্ধে যেমন কঠোর, তেমনি তিনি ছাতকের প্রশাসনে কার্যকর পরিবর্তন এনেছেন।