রাইজিংসিলেট- আশ্রয়কেন্দ্রেও মিলল না রক্ষা—যুক্তরাজ্যে স্ত্রীর মর্মান্তিক পরিণতি, সিলেটের মাসুমের ২৮ বছরের কারাভোগ। যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড শহরে স্ত্রী কুলসুমা আক্তারকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিন্দা হাবিবুর মাসুমকে অন্তত ২৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ব্র্যাডফোর্ড ক্রাউন কোর্ট। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, এই শাস্তি কার্যকর হবে ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে।
২৪ বছর বয়সী কুলসুমাকে ব্র্যাডফোর্ড শহরের কেন্দ্রস্থলে, দিবালোকে, অন্তত ২৫ বার ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন মাসুম। ঘটনার সময় কুলসুমা তার সাত মাস বয়সী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটছিলেন। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হামলার পর মাসুম শান্তভাবে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
আদালতের শুনানিতে উঠে আসে, মাসুম ও কুলসুমার সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতায় পরিপূর্ণ ছিল। ২০২৩ সালের শেষ দিকে ম্যানচেস্টারে তাদের বাসায় মাসুম একবার কুলসুমার গলায় ছুরি ধরে। এরপর নিরাপত্তার জন্য কুলসুমা নারী আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। কিন্তু মাসুম বিভিন্ন উপায়ে তার অবস্থান শনাক্ত করেন—ফোন ট্র্যাকিং, হুমকি এবং ভুয়া জিপি অ্যাপয়েন্টমেন্টের মতো কৌশল ব্যবহার করে।
২০২৪ সালের ৬ এপ্রিল মাসুম সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দাবি করেন তিনি স্পেনে অবস্থান করছেন। সেই সুযোগে কুলসুমা এক বন্ধুর সঙ্গে বাইরে বের হলে মাসুম তাকে আটক করে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করেন। তদন্তে উঠে এসেছে, হামলার পরিকল্পনা আগে থেকেই করা ছিল এবং মাসুম আশ্রয়কেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান করছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর, ৯ এপ্রিল মাসুমকে ব্রিটেনের আইলসবেরি শহরের একটি হাসপাতালের পার্কিং লটে গ্রেফতার করা হয়।
কুলসুমা ও মাসুমের পরিচয় এবং বিয়ে বাংলাদেশে হয়। পরে ২০২২ সালে মাসুম শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাজ্যে এসে ওল্ডহ্যামে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু তাদের দাম্পত্যজীবনে শুরু থেকেই অস্থিরতা বিরাজ করে। একবার কুলসুমা এক পুরুষ সহকর্মীর বার্তা পেলে মাসুমের সন্দেহ ও হুমকির শিকার হন, যার পর তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে।
রায় ঘোষণার পর কুলসুমার পরিবার এক আবেগঘন বিবৃতি দেয়, যেখানে তারা জানান—কুলসুমা ছিলেন একজন প্রিয় কন্যা, বোন, খালা এবং মা। তারা বলেন, “সেই দানব শুধু আমাদের নয়, তার শিশুর কাছ থেকেও কুলসুমাকে ছিনিয়ে নিয়েছে। শিশুটি তার মাকে আর কখনো জানবে না—শুধু গল্প আর ছবিতেই থাকবে তার মা।