
রাইজিংসিলেট- বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থান নিয়ে তৈরি হয়েছে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি, বিশেষ করে যারা সদ্য কম্পিউটার সায়েন্স বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে স্নাতক হয়েছেন, তাঁদের জন্য বিষয়টি হয়ে উঠেছে চ্যালেঞ্জিং। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দ্রুত প্রসারের কারণে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
নিউ জার্সির ব্লুমফিল্ড কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও গেম প্রোগ্রামিংয়ে ডিগ্রি অর্জনকারী আব্রাহাম রুবিও গত কয়েক মাসে ২০টিরও বেশি চাকরির জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু এখনও কোনো জায়গা থেকে ইতিবাচক সাড়া পাননি। তাঁর মতো একই অভিজ্ঞতা আরও অনেক নতুন গ্র্যাজুয়েটের।
২০২২ সালের পর থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও গণিত বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের চাকরি পাওয়ার হার ৮% হ্রাস পেয়েছে বলে জানায় অক্সফোর্ড ইকোনমিকস। একইসাথে, ‘ইন্ডিড’ নামক চাকরি খোঁজার সাইটে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট পদের বিজ্ঞাপন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৭১% কমেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, এআইয়ের প্রভাব এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ প্রযুক্তি খাতের চাকরির বাজারকে সরাসরি প্রভাবিত করছে।
বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও এখন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগে সতর্ক হয়ে উঠেছে। মাইক্রোসফট বাজারমূল্যে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করলেও সম্প্রতি প্রায় ৯,০০০ কর্মী ছাঁটাই করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও জানিয়েছেন, বর্তমানে তাদের ৩০% কোড এআইয়ের মাধ্যমে লেখা হচ্ছে।
এ অবস্থায় কিছু শিক্ষার্থী কাজ খুঁজে পেতে ১০০টিরও বেশি আবেদন করছেন। এলমস কলেজ থেকে স্নাতক জুলিও রদ্রিগেজ বলেন, বর্তমান চাকরির বাজারে সুযোগ পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান থেকে পাস করা নিক ভিনোকুরের মতে, এআই টুলস জুনিয়র ডেভেলপারদের ভূমিকা কমিয়ে দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নতুন গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার জাতীয় গড় বেকারত্বের হার থেকে বেশি। ফলে অনেকে সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের হতাশা প্রকাশ করছেন।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পাঠ্যক্রমে এআই বিষয়ক কনটেন্ট যুক্ত করছে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, যদিও প্রাথমিক কোর্সগুলোতে এখনো এআই টুলস নিষিদ্ধ, তবে পরবর্তী ধাপের কোর্সগুলোতে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি এআই সম্পর্কিত বিষয়গুলো যুক্ত করা হচ্ছে।
এমনকি কোডিং বুটক্যাম্পগুলোও তাদের পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন এনেছে। ‘জেনারেল অ্যাসেম্বলি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সিইও জানান, এখন শুধু সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নয়, বরং বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদেরও এআই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগের প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের তুলনায় এআইয়ের প্রভাব অনেক গভীর। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন কমসংখ্যক কর্মী নিয়ে, কিন্তু অধিক দক্ষতার ভিত্তিতে কাজ করতে আগ্রহী। তাই শুধু কোডিং জানলেই চলবে না—সিস্টেম বুঝতে পারা, সমস্যা সমাধান, ও সৃজনশীল চিন্তা করাও হবে আগামীর মূল দক্ষতা।
অভিজ্ঞ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, এআই কখনোই একজন প্রকৃত ইঞ্জিনিয়ারকে পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। তবে যারা এআই টুলসকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারবেন, তারাই চাকরি বাজারে টিকে থাকার সম্ভাবনা রাখবেন।