
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে তারিক সাইফ মামুন (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছে একদল দুর্বৃত্ত।
দিনে-দুপুরে রাজধানীর বুকে ঘটে যাওয়া এ নৃশংস ঘটনায় জোর তদন্তে নেমেছে পুলিশ। আর তাতেই এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারণ হিসেবে বেরিয়ে এসেছে ব্যাপক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, নিহত তারিক সাইফ মামুন (৫৫) আদতে একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী।
সোমবার (১০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, দুর্বৃত্তরা তাকে ধাওয়া করে খুব কাছ থেকে ৬-৭টি গুলি করেছে। প্রাণ বাঁচাতে হাসপাতালের ভেতর ঢুকতে চেষ্টা করেছিলেন ওই ব্যক্তি।
এদিকে ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, এক ব্যক্তি (তারিক সাইফ মামুন) ধাওয়া খেয়ে দৌড়ে হাসপতালের ভেতর ঢুকছেন। তার পেছনে ২ ব্যক্তি পিস্তল বের করে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। হামলাকারীদের একজনের মুখে মাস্ক পরা। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। গুলি ছুড়ে তারা পালিয়ে যান।
পুলিশের ওই সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তি একসময় আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী ছিলেন। তবে অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে একটা সময় বিরোধ শুরু হয়, যা দীর্ঘদিন ধরে চলছিল।
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলের ওয়ার্ড মাস্টার মহিবুল্লাহ জানান, বেলা ১১টার দিকে তাদের হাসপাতালের সামনের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। শব্দ শুনে কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের মেইন গেটের সামনের রাস্তায় গেলে রক্তাক্ত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখেন তারা। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে নিজেদের হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি দেখে সেখান থেকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও মামুন একসময় হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকার আতঙ্ক ছিলেন। তাঁদের গড়ে তোলা বাহিনীর নাম ছিল ‘ইমন-মামুন’ বাহিনী। তাঁরা দুজনই চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলার আসামি। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী, মামুনের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মোবারক কলোনী এলাকায়। তার জন্ম ১৯৭০ সালে। তার বাবার নাম এসএম ইকবাল।
নিহত মামুনের পূর্ব পরিচিত ফাইজুল হক অপু নামে এক ব্যক্তি জানান, সকালে নিহত ব্যক্তির ফোন থেকে তাকে কল করে ঘটনাটি জানানো হয়। এরপর তিনি কাকরাইল থেকে ঢাকা মেডিকেলে উপস্থিত হয়ে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করেন।
তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহত তারিক সাইফ মামুন একজন ব্যবসায়ী। এর আগে, গাজীপুরে তাদের পরিচয় হয়েছিল।
মামুনের পরিবার বলছে, তিনি দুই দিন ধরে রাজধানীর বাড্ডার ভাড়া বাসায় ছিলেন। আজ সকালে একটি মামলায় আদালতে তার হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। এ জন্য তিনি সকালে বাসা থেকে বের হন।
মামুনের স্ত্রী বিলকিস আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, তারা ধারণা করছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের লোকজন এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। এর আগেও ইমনের লোকজন মামুনকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।