
সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসদরের বাগানবাড়ি কমিউনিটি সেন্টারে দিরাই–শাল্লাবাসী কয়, কথায় নয়—কাজে পরিচয়” শ্লোগানকে সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের লক্ষ্যে এক গণবৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) দিনব্যাপী সুনামগঞ্জ-২ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে স্থানীয় পূজারী, মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, সাংস্কৃতিককর্মী,কৃষক, ইউপি সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বক্তারা তাদের এলাকার দীর্ঘদিনের নানামুখী সমস্যা তুলে ধরেন—রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সংকট, বিদ্যুৎ সমস্যা, স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি, মামলা–জট, ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা প্রভৃতি।
গণবৈঠকে উপস্থিত বক্তা শিবলী আক্তার বলেন,আমার ছেলে অসুস্থ, তার চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু আমার সেই সামর্থ নেই। বিদ্যুৎ বিহারী বলেন, আমরা একজন জনবান্ধব প্রতিনিধি চাই।
একজন পূজারী বলেন, এই আসনে দল দেখে ভোট দেওয়া হয় না, ব্যক্তির যোগ্যতা দেখে ভোট দেওয়া হয়।একজন ইউপি সদস্য জানান, পৌরসভার কাছে বাঙালগাঁও নামে একটি গ্রাম আছে। কিন্তু সেখানে যেতে সারা বছর নৌকা ব্যবহার করতে হয়। ফলে স্কুল–কলেজে যেতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সমস্যাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে শিশির মনির বলেন, আমি চীনে দেখেছি—সেখানকার জনগণ নিজেদের উদ্যোগে স্কুল, কলেজ, ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ করে। বড় প্রকল্পগুলো সরকার করে। আমাদেরও সেই মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
মসজিদ–মন্দির উন্নয়ন সম্পর্কে তিনি বলেন,১০ কোটি টাকা ব্যয় করলে দিরাই–শাল্লার সব মসজিদ–মন্দিরের সমস্যা একবারেই সমাধান করা সম্ভব।
তিনি আরও জানান—এলাকায় প্রতিবন্ধী, অটিজম আক্রান্ত, হাত–পা হারানো, বিধবা ও হার্টে ছিদ্র আছে—এমন ৫ হাজার মানুষ আছেন।বেকারের সংখ্যা প্রায় ৪৭ হাজার।
দিরাইয়ে উন্নত স্বাস্থ্যসেবার জন্য রয়েছে মাত্র একটি হাসপাতাল।এলাকায় মামলা–জটের সংখ্যা প্রায় এক হাজার।
তিনি আরও বলেন,যদি জনগণের কাছে জবাবদিহিতা না থাকে, তাহলে জনগণের ক্ষমতা শুধুই ভোটের সময় অন্ধকার ঘরে সিল মারা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। এরপর আমরা ঢাকায় গিয়ে বসে থাকব, আর আপনারা টিভিতে দেখে বলবেন—এই তো দেখছ কারবারটা।
ধর্মীয় সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা নিয়ে এক পূজারীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন করা যাবে না। কে মুসলমান, কে হিন্দু—এটা দেখার বিষয় নয়। দেখা দরকার, সে মানুষ কিনা। মানবিক সমাজ গড়তে হলে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে সামগ্রিকভাবে যে প্রধান সমস্যাগুলো উঠে এসেছে তা হলো- ধল–দিরাই–মার্কুলি সড়ক সংস্কার,তাড়ল–রনপুর ব্রীজ নির্মাণ,দশ হালের গোপাটের উন্নয়ন,তাড়াপাশা বাজার থেকে আবুরা সড়ক সংস্কার,ভরারগাঁও রাস্তা ও কুলার বাজারের রাস্তা উন্নয়ন,মকসুদপুর–কর্ণগাঁও পুরাতন ব্রীজ পুনর্নির্মাণ,মকসুদপুর হাই স্কুল এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন, শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে – প্রতিটি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন,ইংরেজি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি,হাওর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা,শিক্ষার্থীদের জন্য হাফভাড়া চালু,প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব আরোপ, বিদ্যুৎ ও প্রযুক্তি সেবায় – বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংকট ও লোডশেডিং সমস্যা সমাধান,ভরারগাঁও এলাকায় কারেন্ট সমস্যা নিরসন, উন্নত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা, হাওর এলাকায় জরুরি মেডিকেল সাপোর্ট বৃদ্ধি, মৎস্য সম্পদ ও নদী ব্যবস্থাপনা- প্রকৃত মৎস্যজীবীদের নদীতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা,চানপুর নদী উন্মুক্ত করা,ভাটিদল–দলবাজার অভারব্রিজ নির্মাণ, সামাজিক সমস্যা ও মামলা–জট,এলাকায় মামলা–জট কমানো,গ্রাম্য বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা,ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন,ঈদগাহ মাঠের উন্নয়ন,কবরস্থানের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধীদের ভাতা বৃদ্ধি,পরিবারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।গণবৈঠকে অংশ নেওয়া জনগণ তাদের দাবি–দাওয়া তুলে ধরেন এবং উন্নয়নমুখী ইশতেহার তৈরিতে এসব সমস্যাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান।
জনগণের ক্ষমতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি এমপি কোনো বরাদ্দ পান, জনগণ তার কাছে জিজ্ঞেস করবে সেই টাকা কোথায় খরচ হলো। জবাবদিহিতা থাকতে হবে। নেতাদের ভয় না পেয়ে জনগণকে প্রশ্ন করতে হবে।