
রাইজিংসিলেট- কলকাতায় ‘আওয়ামী লীগের অফিস’ নিয়ে গুঞ্জন: নেতাদের প্রতিক্রিয়া ও বাস্তব চিত্র। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রায় ৪৫ হাজার নেতাকর্মী। বেশিরভাগই অবস্থান নিয়েছেন কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায়, যেখানে খাবার ও আবাসনের সুবিধা তুলনামূলক ভালো। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, এদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে রয়েছেন।
এই প্রেক্ষাপটে, কলকাতায় আওয়ামী লীগের অফিস চালুর গুঞ্জন উঠেছে। কখনো শোনা যাচ্ছে ভারতে বসেই দলটি প্রবাসী সরকার গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে, আবার কখনো কলকাতায় অফিস নেওয়ার খবর সামনে আসছে। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় বা রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা এ ধরনের কোনও খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেনি। কলকাতায় অবস্থানরত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও এই তথ্যকে “ভৌতিক” ও “অবাস্তব” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
দলের তিন সিনিয়র নেতা—জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাসিম ও এস এম কামাল হোসেন—কলকাতায় অবস্থানরত নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
নানকের ভাষ্য অনুযায়ী,
কলকাতায় আওয়ামী লীগের অফিস নেওয়ার কোনো ভিত্তি নেই। তার ভাষায়, “এই ধরনের খবর কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আওয়ামী লীগের চরিত্র হননের চেষ্টা হিসেবে এগুলো ছড়ানো হচ্ছে।”
এস এম কামাল হোসেনের মতে,
“আমরা সবাই গোপনে থাকি। কেউ যদি কোথাও বসে থাকে বা দেখা-সাক্ষাৎ করে, তা দলীয় অফিস হিসেবে ধরে নেওয়া যায় না। অফিস বা সংগঠিত কার্যক্রমের কোনো প্রশ্নই আসে না।”
গুজবের প্রসঙ্গে নানক আরও বলেন,
“এটি ১৯৭১ সালের মতো পরিস্থিতি নয় যে প্রবাসী সরকার গঠন করতে হবে। শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রধানমন্ত্রী। কাজেই প্রবাসী সরকার গঠনের প্রশ্নই আসে না।”
গোপন বৈঠক ও ঈদ আয়োজন
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, কলকাতার রাজারহাট নিউটাউনের অ্যাকশন এরিয়া-১ অঞ্চলের একটি বাণিজ্যিক ভবনের ভাড়াকৃত একটি ব্যাঙ্কয়েট হলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। একই স্থানে ঈদ উপলক্ষে ইফতার অনুষ্ঠানও করা হয়েছে। তবে এগুলো দলীয় অফিস নয়, বরং অস্থায়ী ভাড়া নেওয়া স্থান।
ঈদের আগে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত তিনটি ইফতার পার্টির আয়োজন করে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো।
কলকাতার বিভিন্ন শপিংমল, বিশেষ করে নিউটাউনের সিটি সেন্টার ২ ও ইকোপার্ক এলাকায় ছাত্রলীগের কিছু নেতার উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
প্রকাশ্যে দলীয় কর্মকাণ্ড চালানোর ইচ্ছা
দলটির অনেক নেতাকর্মী এখন আর পুরোপুরি গোপনে থাকতে আগ্রহী নন। তারা ভারতে দলীয় কার্যক্রমকে আরও সক্রিয় করতে চান। দিল্লিতে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। দলনেত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি থাকলেও শেষ মুহূর্তে ভারত সরকারের অনীহার কারণে সেই উদ্যোগ বাতিল করতে হয়।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, অনলাইনে নিয়মিত বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এসব বৈঠকে মাঝে মাঝে শেখ হাসিনাও অংশ নেন। কিন্তু ভারত সরকারের অনুমতি না থাকায় এসব বৈঠকের বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।
কলকাতায় আওয়ামী লীগের অফিস রয়েছে—এই দাবির কোনও প্রমাণ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বা গোয়েন্দা সংস্থা দেয়নি। দলটির নেতারাও একে “কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় দলীয় বৈঠক ও সামাজিক অনুষ্ঠান হয়েছে, সেগুলোকে দলীয় অফিস হিসেবে উপস্থাপন করার পেছনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।