
রাইজিংসিলেট- মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানা সম্পর্ক-আত্মীয়, প্রতিবেশী ও পরিচিতদের সঙ্গে লেনদেন- ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুনিয়ার পরীক্ষায় সফল হতে যেমন আল্লাহর হুকুম মানা জরুরি, তেমনি নবী করিম (সা.) যে আদর্শ ও শিষ্টাচার শিখিয়েছেন তা অনুসরণ করাও মুমিনের জন্য অপরিহার্য।
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের গুরুত্ব
কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে-
“বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করবেন।” (সুরা আলে ইমরান, ৩১)
আরেক জায়গায় জান্নাতের সুখবর দেওয়া হয়েছে সেই সব মানুষকে, যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। (সুরা বাকারা, ২৫ ও ৮২)
দৈনন্দিন জীবনের শিষ্টাচার
রাসুল (সা.) দৈনন্দিন কাজগুলোতে শিষ্টাচার শেখাতে গিয়ে বলেছেন- ভালো কাজ ডান দিক দিয়ে শুরু করা উত্তম। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) জানান যে, নবীজি (সা.) অজু, চুল আঁচড় কিংবা জুতা পরা—এসব বিষয়েও ডান দিককে অগ্রাধিকার দিতেন। (বুখারি ৫১০; আবু দাউদ ৪০৯৩)
এ ছাড়া প্রতিবেশীকে ভালো আচরণ করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। বলেন- আল্লাহর কাছে সে-ই উত্তম প্রতিবেশী, যে তার প্রতিবেশীর জন্য কল্যাণকর। (তিরমিজি ১৯৫০)
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কুরআনে সতর্ক করে বলা হয়েছে—যারা আত্মীয়তার বন্ধন ভেঙে ফেলে, আল্লাহ তাদের প্রতি লানত করেন। (সুরা মুহাম্মাদ, ২২–২৩)
রাসুল (সা.) আরও বলেছেন—যে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহিহ মুসলিম ৬২৯০)
তাহলে ৩ দিনের বেশি কথা না বলা কি নিষিদ্ধ?
সহিহ হাদিসে এসেছে—কোনো মুসলিমের জন্য তার মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে ৩ দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখা বৈধ নয়। নবীজি (সা.) বলেছেন—
“তোমরা হিংসা করবে না, বিদ্বেষ পোষণ করবে না এবং পরস্পরের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবে না। মুসলিম অন্য মুসলিমকে ৩ দিনের বেশি বর্জন করতে পারে না।” (বুখারি ৫৬৩৯)
কিন্তু ব্যতিক্রম কি আছে?
হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক বা নিরাপত্তাজনিত কারণে ৩ দিনের বেশি কথা না বলার অনুমতি রয়েছে—
যদি অধীনস্থ কাউকে সংশোধনের উদ্দেশ্যে সাময়িকভাবে দূরত্ব তৈরি করা প্রয়োজন হয়।
যদি কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
এসব অবস্থায় সময়সীমা ৩ দিনের বেশি হলেও গুনাহ হয় না।
অযৌক্তিক কারণে সম্পর্ক ছিন্ন করা বৈধ নয়
যৌক্তিক কারণ ছাড়া রাগ, অভিমান বা স্বার্থের কারণে আত্মীয়তা বা মুসলিম ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক ছিন্ন করা ইসলামে অনুমোদিত নয়। কারণ এটি অন্যায়, এবং এর ভয়াবহ পরিণতি রয়েছে।