
রাইজিংসিলেট- বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে প্রবেশের নিয়ম আরও কঠোর হয়ে উঠছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এবার এমন একটি পরিকল্পনা সামনে এনেছে, যার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ইচ্ছুক কিছু বিদেশি পর্যটককে গত পাঁচ বছরের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের তথ্য দিতে হতে পারে। জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি দেখিয়ে নেওয়া এই উদ্যোগ ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পরিকল্পনা কী?
মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (CBP) সম্প্রতি ফেডারেল রেজিস্টারে একটি প্রস্তাব প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ভিসা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পাওয়া কিছু দেশের নাগরিকদের ভ্রমণের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সংক্রান্ত তথ্য জমা দিতে হবে।
এই উদ্যোগটি ট্রাম্প প্রশাসনের একটি নির্বাহী আদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য ছিল বিদেশি সন্ত্রাসবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীদের যাচাই আরও কঠোর করা।
কারা এই নিয়মের আওতায় আসবেন?
এই নিয়ম মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রাম-এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য হবে। এসব দেশের ভ্রমণকারীরা ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথরাইজেশন (ESTA) ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য ব্যবসা বা পর্যটনের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন।
এই তালিকায় যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরায়েলসহ মোট ৪২টি দেশ রয়েছে। বর্তমানে ESTA আবেদনে সীমিত কিছু ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হয় এবং ২০১৬ সাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য দেওয়ার একটি ঐচ্ছিক অপশন রাখা আছে।
নিয়মটি কীভাবে কার্যকর হতে পারে?
প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে আবেদনকারীদের গত পাঁচ বছরে ব্যবহৃত সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টের ইউজারনেম বা হ্যান্ডেল জানাতে হবে। তবে পাসওয়ার্ড বা ব্যক্তিগত লগইন তথ্য দিতে হবে না। কর্তৃপক্ষ কেবল প্রকাশ্যে থাকা তথ্য পর্যালোচনা করবে।
এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে ব্যবহৃত ফোন নম্বর এবং গত দশ বছরে ব্যবহৃত ইমেইল ঠিকানার তথ্যও দিতে হতে পারে। ভবিষ্যতে ESTA ফরমে আরও সংবেদনশীল তথ্য যুক্ত করার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে—যেমন ডিজিটাল ছবির মেটাডেটা, পরিবারের সদস্যদের বিস্তারিত পরিচয় এবং বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিস ইত্যাদি)।
এখন কেন এই উদ্যোগ?
আসলে ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের বাইরে থাকা দেশগুলোর নাগরিকদের কাছ থেকে ২০১৯ সাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। নতুন এই প্রস্তাব সেই নীতিরই সম্প্রসারিত রূপ।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এই নজরদারি ব্যবস্থা চালু হলেও, পরবর্তী প্রশাসনেও তা বহাল ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও সীমান্ত নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক যাচাই জোরদার করার পক্ষে কাজ করছে।
গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ফোন নম্বর, ইমেইল এবং বায়োমেট্রিক তথ্য একসঙ্গে সংগ্রহ করা হলে ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিসর মারাত্মকভাবে সংকুচিত হবে।
বিশেষ করে যারা ছদ্মনাম ব্যবহার করে অনলাইনে মত প্রকাশ করেন, তাদের পরিচয় গোপন রাখার সুযোগ প্রায় শেষ হয়ে যাবে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্ন
সমালোচকদের আশঙ্কা, এই নজরদারি ব্যবস্থা অনলাইনে স্বাধীন মতপ্রকাশকে নিরুৎসাহিত করবে। যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা, কাজ বা ভ্রমণে আগ্রহী অনেক বিদেশি হয়তো ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মত প্রকাশে আরও সতর্ক বা নীরব হয়ে পড়বেন।
আইনবিদদের মতে, এমন পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে নিশ্চিত করা বাকস্বাধীনতার চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক হতে পারে।