
খালি পায়ে তপ্ত কয়লার ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে একের পর এক মানুষ। অথচ তাদের চোখে নেই কোনো ভয় বা যন্ত্রণা; বরং মুখে ফুটে আছে শান্ত তৃপ্তি ও গভীর বিশ্বাস। এভাবে জ্বলন্ত কয়লার ওপর দিয়ে হাঁটা শুধু সাহসের প্রদর্শন নয়, এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা প্রাচীন তাওবাদী দর্শনের প্রতীক—যা প্রতি বছর থাইল্যান্ডের ফুকেটে আয়োজন করে চীনা বংশোদ্ভূত থাই নাগরিকরা।
উৎসবটি সাধারণত চীনা চন্দ্রপঞ্জিকার নবম মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় থাইল্যান্ডে বসবাসকারী চীনা বংশোদ্ভূত মানুষরা নয় থেকে দশ দিন পর্যন্ত নিরামিষ জীবনযাপন করেন। তারা মাছ, মাংস, মদ, পেঁয়াজ, রসুন বা যেকোনো ধরনের তামসিক খাবার খাওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখেন। তাদের বিশ্বাস, এতেই মেলে ঈশ্বরের আশীর্বাদ।
এই ধর্মীয় উৎসবটি ফুকেট ভেজিটেরিয়ান ফেস্টিভ্যাল বা নাইন এম্পেরর গডস ফেস্টিভ্যাল নামে পরিচিত। প্রাচীন চীনের তাওবাদী দর্শনে আগুনকে বিশুদ্ধতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়, যার স্পর্শে মানুষের জীবনের সমস্ত অমঙ্গল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ভক্তদের বিশ্বাস, আগুনই পারে আত্মাকে শুদ্ধ করতে এবং পাপের ছায়া ও অশুভ শক্তিকে দূর করতে।
অনুষ্ঠান শেষে শুরু হয় শোভাযাত্রা। জুই তুই মন্দিরের চারপাশ তখন জ্বলে ওঠে আতশবাজির আলোয়, কেউ কাঁধে তুলে নেয় দেবতার পালকি—সবকিছুই হারিয়ে যায় বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক অনুভূতির মধ্যে।
এই উৎসবে মা সঙ নামে পরিচিত ভক্তরা নিজেদের গাল বা শরীরে তরবারি, ছুরি, লোহার রড কিংবা অন্যান্য ধারালো অস্ত্র বিদ্ধ করেন। তারা মনে করেন, এই ত্যাগ আর যন্ত্রণা সহ্য করার মধ্য দিয়েই তারা সমাজের অমঙ্গল, দুর্ভাগ্য ও অশুভ শক্তি দূর করে আনতে পারেন শান্তি আর সমৃদ্ধি। উৎসব চলার সময় তারা এমন এক ধ্যানমগ্ন অবস্থায় থাকেন, যেখানে শরীরের ব্যথা বা পোড়া কিছুই টের পান না।