গাজায় খাদ্যসংকট এখনো বিপর্যয়কর অবস্থায় রয়ে গেছে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ইসরায়েল মানবিক সহায়তা প্রবেশে ক্রমাগত বাধা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত অবাধ প্রবেশের আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন দুই হাজার টন খাদ্যসামগ্রী প্রবেশের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বর্তমানে গড়পড়তা মাত্র ৭৫০ টন খাদ্য গাজায় প্রবেশ করছে। এর প্রধান কারণ হলো, ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মাত্র দুটি প্রবেশপথ—কেরেম আবু সালেম এবং আল-কারারা—খোলা রয়েছে।
ডব্লিউএইচও প্রধান তেদ্রোস আধানোম গেব্রেইয়েসুস বলেন, পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ, কারণ যে পরিমাণ ত্রাণ ঢুকছে, তা যথেষ্ট নয়। খাবার পর্যাপ্ত না থাকায় ক্ষুধার কষ্ট একটুও কমেনি।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজার কমপক্ষে এক-চতুর্থাংশ জনগণ অনাহারে ভুগছে, যার মধ্যে ১১ হাজার ৫০০ গর্ভবতী নারীও রয়েছেন। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে, অপুষ্টির এই প্রভাব গাজার মানুষের ওপর প্রজন্মগত প্রভাব ফেলবে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) উপপরিচালক অ্যান্ড্রু স্যাবার্টন জানান, ২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে যেখানে ৭০ শতাংশ নবজাতক স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিত, সেখানে এখন ৭০ শতাংশই অকালে বা কম ওজন নিয়ে জন্মাচ্ছে। তিনি সতর্ক করেন, অপুষ্টির প্রভাব মা ও নবজাতকের ওপর আজীবন থেকে যাবে, যা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। গত আগস্টে গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়।
মঙ্গলবার ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, মার্কিন মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, সীমিত প্রবেশপথের কারণে মানবিক সহায়তা অপ্রতুল। ফিলিস্তিনি কৃষি সংস্থার (পিএআরসি) পরিচালক বাহা জাকউত জানান, অনেক সময় বাণিজ্যিক ট্রাকে বিস্কুট, চকলেট, সোডা ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু বীজ, জলপাই বা প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী নিষিদ্ধ রাখা হচ্ছে, যা শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের ন্যূনতম পুষ্টি চাহিদাও পূরণ করতে পারে না।
বৃহস্পতিবার অক্সফাম ও নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলসহ ৪১টি মানবিক সংগঠন এক যৌথ খোলা চিঠিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে, তারা গাজায় ত্রাণ পাঠানোর অনুরোধগুলো ইচ্ছেমতো বাতিল করছে।
তিনি আরও জানান, বাজারে ফল ও সবজির দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা কেনা অসম্ভব; যেমন, এক কিলো টমেটোর দাম প্রায় ১৫ শেকেল (প্রায় ৪.৫০ ডলার) হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা আগে ছিল মাত্র ১ শেকেল।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ১০ থেকে ২১ অক্টোবরের মধ্যে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর ৯৯টি ত্রাণ অনুরোধ এবং জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর ছয়টি অনুরোধও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ইসরায়েল যে ত্রাণ আটকেছে তার মধ্যে তাঁবু, কম্বল, খাদ্যসামগ্রী এবং শিশুদের পোশাকের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যও ছিল, যা যুদ্ধবিরতির সময় অবাধে প্রবেশের কথা ছিল।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬৮ হাজার ২৮০ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৫ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) রায় দেয় যে গাজার জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মানবিক সংস্থাগুলোর দাবি, তাদের সরঞ্জাম ও কর্মীরা প্রস্তুত, কিন্তু প্রবেশের অনুমতি মিলছে না। চিঠিতে তারা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মানার আহ্বান জানিয়েছে।