চোরাচালান পণ্য দিয়ে রাতারাতি হয়ে যান কোটিপতি,বর্তমানে নামধারী কয়েকজন সাংবাদিক কয়েকজন যুবদল ও সেচ্ছাসেবকদলের নেতা ।
ছাত্রলীগের পদ পেয়ে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই হয়ে যান কোটিপতি। এক কোটি নয় কয়েক কোটি টাকার মালিক। এরপর সেই টাকা থেকেই শুধু বেড়েছে টাকা।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম আহমদ এবং সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রুহেল আহমদ ।
তাঁদের হাতেই সিলেটে চিনি চোরাচালান সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়েছিল। প্রতিদিন এদের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার চিনি চোরাচালান হত সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন জেলায়। চোরাচালানকারিরা এদের মাধ্যমে নির্ভয়ে তাদের ব্যবসা চালিয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাজমুল ও রাহেলের ঘনিষ্ঠ ২ জন সহকর্মী জানান, ভারত থেকে বর্ডার ক্রস হয়ে সোজা চিনি চলে আসত নগরীতে। কোন বাধার মুখে পড়তে হতনা চোরাচালানিদের।
গাড়ি গুলোর মধ্যে কত বস্হা চিনি আছে তা বিভিন্ন বর্ডারে থাকা তাদের লোকদের হিসাব দিয়ে তারপর ছাড়া হত। চিনির গাড়িগুলো সিলেট নগরীতে ঢুকার আগে বিভিন্ন স্পটে ফাইনাল হিসাব করতেন তাদের ম্যানাজাররা। বর্ডার এলাকায় তাদের সহযোগীর দেয়া হিসাব মিলে গেলে গাড়িগুলোকে গ্রীন সিগনাল দেয়া হত।
চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ভর্তি বানিজ্য, জায়গা দখলসহ এমন কোন অবৈধ কাজ নেই এরা করে নাই। রাতারাতি ফ্ল্যাট, দামি গাড়ি, এলপিজি ফিলিং স্টেশনসহ নানা সম্পদ গড়েছেন। তবে সবচেয়ে সহজ ভাবে টাকার পাহাড় বানিয়েছন ভারত থেকে আসা অবৈধ চিনি ও অন্যান্য পণ্য চোরাচালানের মাধ্যমে।
প্রতি চিনির বস্হা থেকে এরা প্রত্যেকে পেত ১০০ টাকা করে। তাদের ম্যানাজারের কাজ ছিল প্রতিদিন কত বস্তা চিনি ঢুকছে সেই হিসাব রাখা। তারও বেতন ছিল ভাল। কয়েক মাসের মধ্যে সেও মোটর সাইকেলের মালিক হয়ে যায় তাও আবার জিক্সার ব্রান্ড।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তথ্য দেয়া সেই দুই নেতা বলেন, আমরা প্রতিদিন ফজর থেকে শুরু করে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ডিউটি করতাম। তাদের ভাষ্যমতে তিন শিফটে ডিউটি দেয়া হত। এবং এই তিন শিফটে ডিউটির জন্য লোকও ছিল তাদের।
এই নেতারা বলেন, শুধু চিনি নয় ভারত থেকে যত অবৈধ মালামাল আসত সব গুলো থেকে এরা চাঁদা নিত।
সিলেটের জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী শতাধিক স্থান দিয়ে চিনিসহ চোরাই পণ্য সিলেটে ঢোকত।
৫ আগষ্টের পরও কয়েকদিন তাদের লোক চিনি চোরাচালান চালিয়ে গেছে। এরপর আর তাদেরকে চিনির রাজ্যে দেখা যায়নি। সুত্র জানায়, এসব চিনি চোরাচালানিরাই নাজমুল ও রাহেলকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকিয়ে দেয়।
বর্তমান চিনির রাজ্য নিয়ে কথা হয় বুঙ্গা ব্যবসায়ীর সাথে । এসময় তিনি তার পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, বর্তমানে নামধারী কয়েকজন সাংবাদিক ও পুলিশের কিছু অসাধু ব্যাক্তি চিনির চোরাচালানের জড়িত আছেন। তবে তিনি নাম বলতে নারাজ। পাশাপাশি কয়েকজন যুবদল ও সেচ্ছাসেবকদলের নেতার কথাও বলেন।
প্রতিদিন কত বস্হা চিনি আসত এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতিদিন ৩থেকে ৪ হাজার বস্তা চিনি শহরে ঢুকত। এখন কত বস্তা আসছে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে ৩থেকে ৪ বস্তা আসে। তবে সিগনাল ভাল হলে আরো বেশী ঢুকে।
তিনি আরো জানান, সাংবাদিক যে কয়েকজন আছেন তাদেরকে আমি নাজমুল ভাইয়ের সাথে মাঝে মধ্যে দেখেছি। দু একজন ছাড়া বাকি সবাই আওয়ামিলীগ সমর্থিত। তবে এরা এখন যুবদল ও সেচ্ছাসেবকদলের সাথে মিলে কাজ করছে।