 
সিলেটের জাফলং পর্যটন এলাকার ত্রাস হিসাবে পরিচিত, ইসিও এলাকার বালু-পাথর লুটপাটের খলনায়ক একাধিক মামলা এজাহার ভুক্ত আসামী স্থানীয় জাফলং ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি ও গোয়াইনঘাট উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি সমেদকে অবশেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। জাফলং এলাকার বালু-পাথর লুটপাটের সাথে জড়িত শ্রমিকলীগ সভাপতি সমেদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। গতকাল বুধবার সিলেট আদালতে পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়ের করা একটি মামলায় জামিন নিতে আসলে আদালত সমেদের জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। আলোচিত শ্রমিকলীগ সভাপতি সমেদ মিয়া জাফলং এলাকার নয়াবস্তি গ্রামের মৃত মন্তসির আলী উরফে পাখি মিয়ার ছেলে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারে শাসন আমলে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় এবং ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পদকে ব্যবহার করে পুরো জাফলং এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কয়েম করে সমেদসহ তার বাহিনী। চুন থেকে পান হলে নিরিহ শ্রমিকদের উপর চালাতো হামলা- নির্যাতন, নিপীড়ন। প্রশাসনকে জিম্মী করতে রাস্তায় ট্রাক দিয়ে ব্যরিকেড বসিয়ে দিতো সমেদ। ফলে তাকে কোন অপরাধের কারণে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অপরদিকে শ্রমিকলীগ নেতা পরিচয়ে সমেদ সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদের আস্তাভাজন হয়ে উঠে। যার ফলে আওয়ামী লীগের দলীয় ক্ষমতার প্রভাবে ট্রাক-শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে সে সভাপতি হয়ে যায়। এ সময় তার বিরুদ্ধে ভুয়া ভোটার তৈরী করে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ উঠলেও কোন কিছুই তাকে ধমিয়ে রাখতে পারেনি। বিগত বছরের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পঠ পরিবর্তন হলে জাফলং এলাকায় সমেদকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতারা জাফলং এলাকায় ব্যাপক আকারে বালু-পাথর লুটপাট চালায়। বিএনপি নেতাদের শেল্টারে জাফলং এলাকার বালু-পাথর লুটপাট এখন পর্যন্ত ঠিকই চালিয়ে আসছিলো সমেদসহ তার বাহিনী। এক কথায় সমেদ বাহিনী ছিলো অপ্রতিরোধ্য বিগত সরকারের শাসন আমলে জাফলং আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যায়ের সামনে বিএনপির প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম একটি জনসভা করতে গেলে সেই জনসভার মঞ্চ ভেঙ্গে দিয়েছিলো এই সমেদ বাহিনী।
সে সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে ৫ আগষ্টের পরে এ ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানায় বিএনপির পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হলেই সেই মামলার এজাহার ভ‚ক্ত আসামী করা হয় শ্রমিকলীগ সভাপতি সমেদ মিয়াকে। মামলার পরও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের শেল্টারে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাহিরে ছিলো এই সমেদ মিয়া। স্থানীয়রা জানান,শ্রমিক সংগঠনের নেতা হওয়ায় সমেদ বাহিনী ছিলো জাফলংয়ে এলাকায় এক আতঙ্কের নাম। তার শেল্টারদাতা হচ্ছেন বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ। তিনি দল থেকে বহিস্কৃত হলেও তার মদদেই মূলত জাফলং লুটের খলনায়ক হয়ে উঠে সমেদ মিয়া। তারা সঙ্গবদ্ধ ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করে জাফলং এলাকার পাথর রাজ্য ও চোরাচালান সিন্ডিকেট।
সূত্রমতে বিগত বছরে ৫ আগষ্টের পর থেকে জাফলং এলাকায় প্রায় ৩শত কোটি টাকার বালু-পাথর লুটপাট হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ২শত কোটি টাকা। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন ভ‚মি কর্মকর্তা ১৮ আগস্ট গোয়াইনঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন। গত বছরের ১৪ অক্টোবর জাফলংয়ে অবৈধভাবে বালু ও পাথর তোলা বন্ধে টাস্কফোর্সের অভিযান চালায় পরে পাথর লুটপাটের ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করে। মামলায় মোট আসামি করা হয়েছিলো ১১৪ জনকে।” দুই মামলাই আসামি করা হয় শ্রমিকলীগ সভাপতি সমেদ মিয়াকে। থানা পুলিশের বিট অফিসারও তার কাছে অসহায় ছিলেন। জাফলং এলাকার পরিবেশ বিধ্বংসী এই ধ্বংসজজ্ঞের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যে কয়েকজন তার মধ্যে সমেদ মিয়া উল্লেখ যোগ্য। সম্প্রতি জাফলংয়ে উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকের ঘটনায় ১৫৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। এই মামলায় আসামী শ্রমিকলীগ সভাপতি সমেদ মিয়া। পুলিশের সূত্রমতে সমেদ মিয়া এখন পর্যন্ত ৫টি মামলার এজাহার ভুক্ত আসামী।
 
 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                 
                                 
                                 
                                