ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার সরাসরি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে হুমকি দিলেন । তিনি বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ না করলে বাড়তি কর, মাসুল, নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোস্যালে তিনি বলেছেন, পুতিনকে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে, না হলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেছেন, এখনই মীমাংসা করুন, এই হাস্যকর যুদ্ধ থামান। না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বুধবার তিনি এই প্রথমবার পুতিনকে নিয়ে মুখ খুললেন। তিনি বলেছেন, আপনি যদি চুক্তি না করেন, তাহলে রাশিয়া ও যুদ্ধে অংশ নেওয়া অন্য দেশের বিরুদ্ধে চড়া হারে কর, শুল্ক বসানো ও আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা ছাড়া আমার সামনে কোনও বিকল্প থাকবে না। তিনি বলেছেন, আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে এই যুদ্ধ শুরুই হতো না। এখন এটা বন্ধ করুন। আমরা সহজ বা কঠিন রাস্তায় হাঁটতে পারি। সহজ রাস্তা সবসময়ই ভালো। তাই চুক্তি করার পক্ষে এটাই সেরা সময়। আর কোনও জীবন যেন নষ্ট না হয়।
এদিকে, জাতিসংঘে রাশিয়ার সহকারী রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই যুদ্ধ শেষ করার চুক্তি বলতে ট্রাম্প কী বোঝাচ্ছেন, সেটা জানা দরকার। আমাদের জানা দরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে চুক্তির অর্থ কী? এটা তো শুধু যুদ্ধ বন্ধের প্রশ্ন নয়। প্রথম ও সবচেয়ে জরুরি প্রশ্নটা হলো, যে কারণে ইউক্রেন সংকট শুরু হয়েছিল সেটা। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়া-বিরোধী মনোভাব নেওয়ার জন্য ট্রাম্প দায়ী নন। তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-প্রস্তুতি নেননি। কিন্তু এখন ওই নীতি বদলের ক্ষমতা তার হাতে রয়েছে।
এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত যুদ্ধের ইতি না টানলে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে যুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যেই চাপে থাকা রাশিয়ার অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগে আছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এই বিষয়ে অবগত পাঁচ জনের বরাতে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। যুদ্ধের কারণে টালমাটাল রাশিয়ার অর্থনীতি ও এর প্রভাবে ক্রেমলিনের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি ওই পাঁচ ব্যক্তির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে এলো। ইউক্রেন অভিযানের কারণে একগাদা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গত দুবছরে তেল, গ্যাস ও খনিজ রফতানি নির্ভর রুশ অর্থনীতির আকার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি সামলাতে উচ্চ সুদহারে একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ ব্যবসার গতি কমে গেছে, তেমনি কর্মী সংকটে দৈনন্দিন কাজ কর্মও চালানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার প্রায় ১০০০ সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমা কর্মকর্তারা। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেইনীয় সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা নিহত হন। এইসব কোরিয়ান সৈন্যকে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তা করতে সে দেশে পাঠানো হয়েছিল। পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলেছেন, মাত্র তিন মাসে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক অঞ্চলে লড়াইয়ে উত্তর কোরিয়ার সেনারা ইতোমধ্যেই প্রায় ৪০ শতাংশ হতাহতের শিকার হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তারা বলেছেন, উত্তর কোরিয়া থেকে পাঠানো আনুমানিক ১১ হাজার সৈন্যের মধ্যে ইতোমধ্যেই ৪ হাজার সৈন্য যুদ্ধে নিহত, আহত, নিখোঁজ বা প্রতিপক্ষের হাতে বন্দি হয়েছেন।
তারা বলেছেন, এই চার হাজার জনের মধ্যে প্রায় ১ হাজার জনই জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে আহতদের কোথায় চিকিৎসা করা হচ্ছে, এমনকি কখন এবং কত সংখ্যক সৈন্য প্রতিস্থাপন করা হবে তাও এখনও স্পষ্ট নয়। দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেইনের গোয়েন্দাদের হিসাবমতে, আনুমানিক ১১ হাজার উত্তর কোরীয় সেনাকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই মোতায়েন হয়েছে কুরস্ক সীমান্তে অঞ্চলে ইউক্রেইনীয় সেনাদের বিরুদ্ধে লড়তে। মূলত গত বছরের আগস্টে ইউক্রেইনীয় সেনারা আচমকা কুরস্কে ঢুকে লড়াই শুরুর পর অঞ্চলটির আংশিক নিয়ন্ত্রণ এখনও কিয়েভের এই সেনাদের হাতে রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার সেনারা যুদ্ধের অভিজ্ঞতার অভাব এবং ভাষাগত সমস্যার মতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার মধ্যে সামরিক সখ্যতা গড়ে উঠে। গত বছরের জুনে ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়া, যা গত বছরের ডিসেম্বরে কার্যকর হয়। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই যুদ্ধে জড়িয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে উন্নত প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জন করতে চায় কিম জং উনের উত্তর কোরিয়া।
নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প অবশ্য বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলে যুদ্ধ বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু কীভাবে যুদ্ধ বন্ধ হবে তা তিনি বলেননি। এখন আরও নিষেধাজ্ঞা বলতে ট্রাম্প কী বোঝাচ্ছেন, সেটাও স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো ইতোমধ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এটাও স্পষ্ট হয়নি ইউক্রেনকে যে লাখ লাখ ডলারের সামরিক সাহায্য দেয় যুক্তরাষ্ট্র, তার কী হবে? ইউক্রেনের বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।