রাইজিংসিলেট- নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য ১২ দফা কাঠামোগত প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের নেতারা আগামী রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসবেন এবং এই প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন।
রাষ্ট্র সংস্কার এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের লক্ষ্যে কমিশন এ প্রক্রিয়া তৈরি করেছে। এতে সময়সীমা, সংসদীয় ভূমিকা, উপদেষ্টা নির্বাচন ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবনার প্রধান দিকগুলো- ১. গঠনের সময়সীমা
সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিন আগে অথবা ভিন্ন কোনো কারণে ভেঙে গেলে ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে হবে।
২. উপদেষ্টা বাছাই কমিটি
সংসদ যদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হয়, তাহলে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হবে। এতে নিম্ন ও উচ্চকক্ষের সরকার ও বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত একজন সদস্য থাকবেন।
বর্তমান এককক্ষীয় সংসদের ক্ষেত্রে কেবল নিম্নকক্ষ থেকে ৭ সদস্যের কমিটি গঠিত হবে।
৩. বাছাই প্রক্রিয়া
কমিটি গঠনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একজন উপদেষ্টাকে মনোনীত করার চেষ্টা করা হবে। ব্যর্থ হলে সরকার ও বিরোধী দল ৫ জন করে এবং তৃতীয় বৃহত্তম দল ৪ জনের নাম প্রস্তাব করবে, মোট ১৪ জন।
৪. সংসদীয় শুনানি ও চূড়ান্ত বাছাই
১৪ জন প্রার্থীর জীবন ও কর্মভিত্তিক ৫ দিনের সংসদীয় শুনানি শেষে, পক্ষগুলো একে অপরের তালিকা থেকে একজন করে বেছে নেবে। অভিন্ন ব্যক্তি মনোনীত হলে তিনি হবেন প্রধান উপদেষ্টা। না হলে ‘র্যাংকড চয়েজ’ পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন হবে।
৫. পদ শূন্য হলে পরবর্তী পছন্দ
প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে, তালিকাভুক্ত দ্বিতীয় পছন্দের ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তিনি অস্বীকৃতি জানালে পরবর্তীজনকে নিয়োগ দেওয়া যাবে।
৬. উপদেষ্টা পরিষদ
প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতির কাছে সর্বোচ্চ ১৫ জন উপদেষ্টার নাম সুপারিশ করবেন। রাষ্ট্রপতি তাঁদের নিয়োগ দেবেন। উপদেষ্টারা মন্ত্রীর মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।
৭. মেয়াদ
এই নির্বাচনকালীন সরকার ৯০ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায়।
সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন- এই কাঠামো কার্যকর করতে সংবিধানের ৫৮(খ) অনুচ্ছেদে সংশোধন আনতে হবে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংসদ বহাল থাকলেও নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সুযোগ রাখতে হবে, যাতে দলনিরপেক্ষতা বজায় থাকে এবং সাংবিধানিক শূন্যতা না ঘটে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা- জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একজন সদস্য জানিয়েছেন, “এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে আমরা এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে চাই, যেখানে অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হবে।”
রোববারের বৈঠকে বড় দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত রূপরেখা প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রেক্ষাপট বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক রয়েছে। ২০১১ সালে আদালতের রায়ে এটি বাতিল করা হয়। এরপর থেকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এই প্রস্তাব নতুন করে রাজনৈতিক সমঝোতার পথ তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।