ঢাকাশনিবার , ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

তিন চাকার মাফিয়াকে বিএনপি নেতা বানানোর ‘টেন্ডার’ এখনও চলমান!

rising sylhet
rising sylhet
ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪ ৫:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আওয়ামী লীগের তিন চাকার মাফিয়াকে বিএনপি নেতা বানানোর ‘টেন্ডার’ এখনও চলমান! দরকষাকষি চলছে বলেও একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে। এদিকে তিন চাকার মাফিয়া সর্বচ্ছ চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তারই কয়েকজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদকে জানিয়েছেন।

কে এই জাকারিয়া: জাকারিয়া আহমদের বাড়ি সিলেট শহরতলির টুকেরবাজারে। বাবার নাম আবদুল হাসিব। ছোটবেলাতেই বাবা তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন। বাবার ত্যাজ্য সন্তান হিসেবে একদম খালি হাতে কর্মজীবন শুরু করা জাকারিয়া আহমদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধা উপশাখাই। কিছুদিন অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করায় শ্রমিকদের সাথে তারা চেনাজানা হতে থাকে। বুদ্ধির জোরে একসময় তাদেরই নেতা বনে যান। মুক্তিযোদ্ধা উপশাখার সভাপতিও হন এক সময়। তারপর থেকেই তার উত্থানের শুরু। এক সময় দখলে আসে সিলেট জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির পদও। তারপর পেরিয়ে গেছে অনেক বছর। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমানের অনুসারী হওয়ার সুবাধে জাকারিয়া সভাপতি পদটি খুব সহজে ভাগিয়ে নেন। দীর্ঘ এ সময়ে দাপটের পাশাপাশি সম্পদও বাড়তে থাকে জাকারিয়া আহমদের। তবে কৌশলী জাকারিয়া আহমদ তার বিশাল সম্পদের খবর সাধারণ শ্রমিকের কাছে আড়াল করেই রাখেন। চোখে পড়ার ভয়ে দেশে তেমন সম্পদ না করলেও বিভিন্ন সূত্র বলছে, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার সম্পদ।

এক সময়ের ফাই- ফরমাশ খাটার চাকরি করা ব্যক্তি এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক। গত ১৭ বছরে আওয়ামিলীগের হয়ে কাজ করে গড়েছেন একটা বাহিনী। কথায় কথায় এসব বাহিনী দিয়ে অবরোধ- ধর্মঘটের নামে চালাতেন আন্দোলন। অবৈধ এসব কর্মসূচীতে সহমত পোষনও করতেন তার কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা পাওয়া আওয়ামিলীগের কর্তা ব্যাক্তিরা। সিলেট নগরীর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয় সংলগ্ন গলির ভেতরে মুক্তিযোদ্ধা উপশাখা অফিসে এক সময়কার ফাই-ফরমাশ খাটা জাকারিয়া আহমদ। কালক্রমে এখন তিনি সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের অবৈধ সভাপতি, জোর করে নির্বাচনবিহীন সভাপতি পদে বসে থাকা জাকারিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে পাহাড় সমান অভিযোগ। জনশ্রোতি রয়েছে জাকারিয়া আহমদ একজন বাটপার প্রকৃতির চতুর লোক।

তিনি যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সেই দলের হয়ে কাজ করা শুরু করেন। মিছিল মিটিংসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন সহজ সরল সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভারদের। সিলেটে যে দলই ক্ষমতায় যায়, সে দলকে তিনি তার সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভারদের বিশাল বাহিনীর কথা জানিয়ে ফায়দা হাসিল করেন। অথচ যাদের ভরসায় তিনি আজ কয়েক কোটি টাকার মালিক সেই সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভারদের কপালে ঝুটেনা ভাল কোন সুযোগ। এভাবেই তিনি গত ১৭ বছর আওয়ামিলীগের দালালি করে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন।

সুত্র থেকে জানা যায়, জাকারিয়া আহমদ গত ১৭ বছর আওয়ামিলীগের একজন পরিবহন নেতা হয়ে বিভিন্ন সময়বিভিন্ন হাসুতে সড়ক অবরোধ-ধর্মঘটের ডাক দিয়ে জনসাধারনকে বুঝাতে চেয়েছেন তিনি সব পারেন। সিলেট অটোরিকশা ছাড়া কারো কোন গতি নেই এটাই তিনি বুঝাতে চান। শুধু তাই নয়, ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা বন্ধে যত আয়োজন সব তার মাধ্যমে করা হয়েছে। কাগজ বিহীন সিএনজি অটোরিকশার টুকেন ব্যবসা ছিল তার নিয়ন্ত্রনে।

সিলেট নগরীর আনাচে কানাচে সিএনজি অটোরিকশা ষ্ট্যান্ড তৈরীতে তার হাত ছিল। তাকে প্রতিষ্ট্যান্ড থেকে মাসে ৫ হাজার টাকা করে দিতে হত। তিনি সিলেট জেলায় একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচয় করতে গিয়ে আওয়ামিলীগের সকল ধরনের কাজে সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভারদের ব্যবহার করেছেন।

সুত্র আরও জানায়, সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভারদের ভিতর বিএনপির এমন হাজারও নেতা কর্মী রয়েছেন যাদেরকে তিনি জোর করে আওয়ামিলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাঠিয়েছেন বা যেতে বাধ্য করেছেন। এভাবেই তিন নির্বাচন ছাড়াই সভাপতি পদ আখড়ে ধরে দেড় যুগেরও বেশী সময় ধরে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদের উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছেন! সিলেট বিভাগের শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে এ ইউনিয়নেই সবচেয়ে বেশি সদস্য। সদস্য সংখ্যা প্রায় অর্ধ লক্ষ। বিশাল এ শ্রমিকের শক্তিকে পুঁজি করে জাকারিয়া আহমদ যখন-তখন সড়কে নেমে পড়েন। প্রতিষ্ঠা করেন ত্রাসের রাজত্ব। ‘ছোট যানে’র নেতা হলেও কাঁপন ধরিয়ে দেন ‘বড় যানে’র নেতাদের মনেও।

দাপটের রাজনীতিতে তিনি সমান তালে পাল্লা দেন ট্রাক- বাসের শ্রমিক নেতাদের সাথে তিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবে প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমানের অনুসারী হওয়ার সুবাধে ভাগিয়ে নিয়েছেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদকের পদও। তার পেছনে অর্ধলক্ষ শ্রমিকের শক্তি ও আওয়ামী লীগের সিলেটসহ বড় বড় কয়েকজন নেতার ছত্রছায়ার পুঁজিই তাকে করে তুলেছে সিলেটের পরিবহন সেক্টরের প্রভাবশালী বাদশা।

সূত্র জানায়, নিরীহ শ্রমিকরা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা দিলেও ইউনিয়ন থেকে কোনো সুবিধাই পান না তারা। অথচ নেতাদের ‘অ্যাকাউন্টে’ টাকা জমছে প্রতিদিনই। শ্রমিকের ঘামের টাকায় বাড়ি-গাড়ি করে এসির নীচে আয়েশি জীবন কাটছে তাদের। অবশ্য এ নেতার উপর অষ্ট প্রহর সাধারণ শ্রমিকের দীর্ঘশ্বাসের ছায়াও পড়ে। লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা দিলেও নিজেদের বিপদে সাধারণ শ্রমিকরা কোনো সহযোগিতাই পান না তার কাছ থেকে। উল্টো ছোটখাট বিবাদ হলে সালিশ বৈঠকের জন্য নিজেদের পকেট খালি করে নেতার পকেট ভারি করতে হয়। নইলে ‘বিচার’ মেলে না। তারপরও সবকিছু মুখ বুজে মেনে নেন তারা। কারণ প্রতিবাদ করলে উল্টো মামলা-হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। গত (০৫ আগষ্ট) ছাত্র-জনতার তোপেড় মুখে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। এতে খুব একটা বেকায়দায় পড়েন জাকারিয়া। নিজের আখের গুছাতে মরিয়া হয়ে পূর্নবাসনের চেষ্টায় ঘুরছেন বিএনপি- জামায়াত নেতাদের দরজায়। তবে কেন্দ্রীয় নির্দশেনার ভয়ে সিলেট বিএনপির মূলধারার নেতারা জাকারিয়াকে পাত্তা না দিলেও অবৈধ কালো টাকার গন্ধে নিজেদের সামলাতে পারেননি কতিপয় হাতেগোনা কয়েকজন বিএনপি নেতা। গত (০৬ সেপ্টম্বর) রাত ৯টার দিকে নগরীর ৩৯নং ওয়ার্ডের টুকের বাজারে জিন্দাবাজার মুক্তিযোদ্ধা উপ-পরিষদ শ্রমিকবৃন্দ- ৭০৭ এর আয়োজিত এক সভায় ‘তিন চাকার’ মাফিয়া জাকারিয়ার সমর্থনে সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আব্দুর রহমান, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. কালাম, জেলা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি ও বর্তমান ৩৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলতাব হোসেন সুমন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমদ, সিলেট সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ওলিউর রহমান আলী (আলীবুর) ও জামায়াত নেতা উসমানকে উক্ত সভায় উপস্থিত হয়ে ‘তিন চাকার’ মাফিয়া জাকারিয়াকে পূর্নবাসন করতে তার পক্ষে সাফাই গেয়ে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। ‘বিএনপিতে চাঁদাবাজ-অনুপ্রবেশকারীদের ঠাঁই নেই’ দলীয় এমন নির্দশনাকে উপেক্ষা করে এই বিএনপি নেতারা ‘তিন চাকার’ মাফিয়া আওয়ামী লীগ অনুসারী জাকারিয়াকে প্রকাশ্য পুনর্বাসনের ঘটনায় ক্ষোভের ঝড় বইছে সিলেট বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনে। এদিকে ‘তিন চাকার’ মাফিয়া জাকারিয়ার অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের উপস্থিতির প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান- যারা আওয়ামী লীগের কালশা না এই চাঁদাবাজ জাকারিয়াকে পুনর্বাসনের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন মূলত তারা নিজেদের নিজ করতে এমনটা করছেন বলে দাবি তাদের।

১৩১ বার পড়া হয়েছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।