চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পদ্মা নদীর ন্যায্য পানি বণ্টনের দাবিতে বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা বিএনপির আয়োজনে শিবগঞ্জ সরকারি মডেল স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মী, স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সাধারণ জনগণ।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা। প্রধান বক্তা ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ, আর বিশেষ অতিথি ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের মুখে শোনা যায় নানা স্লোগান— “চলো জি ভাই, হাঁরঘে পদ্মা বাঁচাই”, “পদ্মা বাঁচাতে ঐক্য গড়ি”, “আমাদের গঙ্গা-পদ্মা, আমাদের অধিকার” ইত্যাদি।
অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা বলেন, “পদ্মা বাঁচাতে না পারলে কৃষি ও দেশ রক্ষা করা সম্ভব নয়। ফারাক্কা বাঁধের কারণে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় ভয়াবহ পানি সংকট দেখা দেয়, আর বর্ষায় গেট খুলে দেওয়ায় নদীভাঙন ও বন্যা দেখা দেয়। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে নদী রক্ষা ও পানি বণ্টনের ন্যায্যতা নিশ্চিত করা জরুরি।
প্রধান বক্তা হারুনুর রশিদ বলেন, “ফারাক্কা ব্যারেজ বাংলাদেশের নদীগুলোর জন্য মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করেছে। ভারত গঙ্গার পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করছে, অথচ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ তার প্রাপ্য পানি পাচ্ছে না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন পদ্মা ব্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। দেশের সার্বভৌম স্বার্থ রক্ষায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।”
বিশেষ অতিথি আমিনুল ইসলাম বলেন, “পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রয়োজন হলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব।”
এর আগে ২ নভেম্বর জেলা শহরের শহীদ সাটু হল অডিটোরিয়ামে ‘পদ্মা বাঁচাও’ দাবিতে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ৭ নভেম্বর বিএনপি ভোলাহাটে আরেকটি সমাবেশ আয়োজন করবে। ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বৃহত্তর কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
উল্লেখ্য, ফারাক্কা ব্যারেজ ইস্যুতে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ‘ফারাক্কা অভিমুখে লং মার্চ’-এর ডাক দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো মানুষ ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে। তিনি বলেছিলেন, “পিন্ডির শৃঙ্খল ছিন্ন করেছি, দিল্লির দাসত্ব করতে নয়।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফারাক্কা বাঁধ চালুর পর থেকে পদ্মার পানিপ্রবাহ প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষি, অর্থনীতি ও পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়ে সুন্দরবনসহ নদীভিত্তিক পরিবেশ ঝুঁকির মুখে পড়েছে।