
সিলেট সিটির পাশে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী আসন সিলেট-৩। চণ্ডীপুল সেতু পেরোলেই শুরু হয় এই আসনের সীমানা। দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ—এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত উপকণ্ঠের এ আসনের ভোটের রাজনীতি বরাবর উত্তাপপূর্ণ। তবে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করার পর সেই চিত্র পুরোপুরি বদলে গেছে।
কিছুদিন আগেও চণ্ডীপুল ও আশপাশের এলাকাগুলোতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। চায়ের দোকান, বাজার, সড়কের মোড়ে—সর্বত্র চলতো নির্বাচনী আলোচনা। কিন্তু এখন সেই জায়গাগুলো অনেকটাই নীরব। রাজনৈতিক আলাপ কমেছে, জনমনে নেই আগের মতো উত্তেজনা।
বিএনপি সিলেট-৩ আসনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালিক-এর নাম। তবে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হলেও স্থানীয় পর্যায়ে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, তিনি দীর্ঘদিন লন্ডনে রাজনীতি করলেও নিজ এলাকার ভোটের মাঠে আগে কখনো সক্রিয় ছিলেন না।
জালালপুর বাজারে কথা হয় অটোরিকশাচালক আজমল আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, নতুন প্রার্থীকে গ্রামের মানুষ ভালোভাবে চেনে না। তাই ভোট নিয়ে আগের মতো আলোচনা নেই। একই মন্তব্য করেন স্থানীয় বিএনপি কর্মী মোজাফ্ফর আহমদও। তিনি জানান, “যোগ্য ও পরিচিত কাউকে মনোনয়ন দিলে সবাই সহজে মেনে নিতো।
সিলাম বাজারের ব্যবসায়ী তমজ্জির আলীর বক্তব্য, গত ১৭ বছর ধরে যারা মাঠে থেকে দল করেছে, মামলা-হামলা মোকাবিলা করেছে, মানুষের পাশে ছিল—তাদের মধ্য থেকে কাউকে দিলে সাধারণ মানুষ খুশি হতো।
বিরাহীমপুর গ্রামের বাসিন্দা মুক্তার আলীও একই সুরে কথা বলেন। তার মতে, সালাম, কাইয়ূম, জামালরা সবসময় মাঠে ছিলেন, মানুষ তাদের চেনে। তাদের কাউকে প্রার্থী করা হলে সমর্থন তৈরি করা সহজ হতো।
মনোনয়ন ঘোষণার আগে এ আসনে বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের একাধিক প্রার্থী মাঠে সক্রিয় ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন— ব্যারিস্টার এম এ সালাম,এম এ কাইয়ূম চৌধুরী,আব্দুল আহাদ খান জামাল,ব্যারিস্টার রিয়াসদ আজিম আদনান ।
তাদের ঘিরেই মূলত নির্বাচনী উত্তাপ তৈরি হয়েছিল। ঘন ঘন শোডাউন, জনসংযোগ এবং সাংগঠনিক তৎপরতায় জমজমাট ছিল পুরো আসন।
বিএনপি নেতৃত্ব প্রকাশ্যে ঐক্যের কথা বললেও তৃণমূল পর্যায়ে নতুন প্রার্থী নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
সিলাম ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক পাবেল রহমান বলেন, এম এ মালিক পুরোনো নেতা হলেও এলাকায় নতুন মুখ। এত অল্প সময়ে ভোটের আবহ তৈরি করা কঠিন হবে।
বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমদ সোহেল বলেন, যারা দীর্ঘদিন মাঠে কাজ করেছেন, তৃণমূল তাদের দিকেই ছিল। এখন নতুন প্রার্থী দেয়ায় মাঠ নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান সুফি বলেন, এলাকায় নিয়মিত অনুপস্থিত থাকার কারণে প্রার্থীর সঙ্গে ভোটারদের বড় একটি দূরত্ব আছে। সেটি পূরণ করা না গেলে ঝুঁকি থেকেই যাবে।
দলীয় মনোবল চাঙ্গা রাখতে ইতোমধ্যে তিন উপজেলায় বর্ধিত সভা শুরু হয়েছে। দক্ষিণ সুরমায় একটি সভা সম্পন্ন হয়েছে এবং ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জে শিগগিরই সভা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।
জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ জানান, সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ চলছে। আশা করি সবাই মান-অভিমান ভুলে একসঙ্গে মাঠে নামবে।
জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক মনোনয়নপ্রত্যাশী এম এ কাইয়ূম চৌধুরী জানিয়েছেন- প্রার্থী ঘোষণার পর একটি নির্দিষ্ট আসনে জেলার নেতাদের নজর নেই। আমরা বলেছি সিলেটের ৬টি আসনই আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে উপহার দিতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতিমধ্যে দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থকরা মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এবং নিরলসভাবে কাজ করছেন বলে জানান- তিনি।