সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের পাশে ফুটপাথ জুড়ে রাখা হয়েছে নীর্মান সামগ্রী। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ফুটপাথ ব্যবহারকারী পথচারীদের।ওই সব নির্মাণসামগ্রী রাখায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সহ সাধারন মানুষকেও সড়কের মাঝখান দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ফলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যবহারকারীরা ।
সিসিক মেয়র ‘প্রতিশ্রুত’ এক মাস পার হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু হকাররা রয়েছে হকারদের জায়গায়ই। তবে সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে- মহানগরের লালদিঘীরপাড়ে স্থায়ী পুনর্বাসন করা হচ্ছে হকারদের। তাদের গলি ও শেড তৈরি করে দেওয়া হবে। এ কাজ টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। রমজানের মধ্যে হকারদের পুরোপুরে সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।
গত ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছিলেন- ‘সিলেট মহানগরের বিভিন্ন সড়কে হকারদের অবস্থান নিয়ে সমালোচনা চলছে। বিষয়টা আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ নিয়ে আমরা কাজ করতে শুরু করেছি। হকার নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টির সঙ্গে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- নাগরিক জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা। রাজপথে হকার থাকার কারণে যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে। ইনশাল্লাহ- আগামী একমাসের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে। সিলেটের রাজপথ অবশ্যই হকারমুক্ত করতে বা রাখতে যা যা করা প্রয়োজন, তার সবকিছু করা হবে।
সিলেট মহানগরের প্রধান সমস্যা হকার। সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান থেকে শুরু করে আরিফুল হক চৌধুরীর সময়েও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ- হকার উচ্ছেদ। কিন্তু কেউই সমাধান করতে পারেননি। অবশ্য আরিফুল হক চৌধুরী নগরভবনের পেছনের লালদিঘীর পাড়ে ‘হলিডে’ মার্কেট চালু করেছিলেন। সেখানে হকাররা গিয়েছিলেনও। কিন্তু কয়েক মাসের মাথায় তারা চলে আসেন ফের সড়ক ও ফুটপাতের উপর। আরিফের দায়িত্ব পালনের শেষ সময় থেকে ফের চরম পর্যায়ে ফুটপাত দখলে নেন হকাররা। বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের নির্বাচনী ইশতেহারেও হকার উচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আগের তুলনায় হকারের সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।
নগরীর বিভিন্ন সড়ক যেমন বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, তালতলা, আম্বরখানা, চৌহাট্টাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার প্রধান সড়কগুলো হকারদের নিয়ন্ত্রণে দেখা গেছে। এ সকল সড়কের দুই পাশের রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে তারা দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছেন। যার ফলশ্রুতিতে নগরীতে দেখা দিচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের স্বাভাবিক চলাচল।
প্রতিদিনই সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মহানগরের প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার সড়কে ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কের অর্ধেকেরও বেশি অংশ হকারদের দখলে থাকে। ভ্রাম্যমাণ কাপড় বিক্রেতা ছাড়াও মাছ এবং সবজি বিক্রেতারাও বসেন সড়ক-ফুটপাতে। খোদ নগরভবনের সামনের অংশ সবজি ও মাছ বিক্রেতারা দখল করে রাখে প্রতিদিন। রাতের বেলা বিদ্যুতের আলোরও সুবিধা পান এসব অবৈধ ব্যবসায়ী।
নগরীর জিন্দাবাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, আগে জিন্দাবাজারে ট্রাফিক জ্যাম লাগলে দুই-তিন মিনিটে তা সমাধান হয়ে যেত। সড়ক ও ফুটপাত হকারদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ায় এ সকল রাস্তায় কোনো কোনো সময় ট্রাফিক জ্যাম প্রায় আধাঘণ্টা পর্যন্তও থাকে।
অপরদিকে, সিসিকের হকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ও স্থান নির্বাচনে নগর কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করেন সিলেট অনেকেই।
সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক বিভাগের হকার উচ্ছেদ বেশিরভাগ সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। পুনর্বাসনের জন্য হকারদের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গাটি তাদের ব্যবসার জন্য উপযুক্ত ছিল না। হকারদের জন্য নির্মিত হকারশেডগুলো মানসম্মত ছিল না। এখানে সিটি করপোরেশন যে অর্থ ব্যয় করেছিল তা জলে গেছে।
সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন,আসন্ন রমজান মাস চলাকালেই মহানগরের সব হকার ফের লালদিঘীর পাড়ের ‘হলিডে’ মার্কেটে নিয়ে যাওয়া হবে ।হকারদের স্থায়ী পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করছে সিসিক। আর এ জন্য লালদিঘির পাড়ে বেশ কিছু কাজ করতে হচ্ছে। সে কাজের টেন্ডার হয়ে গেছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হয়ে যাবে। সেখানে যাতে বৃষ্টিতে ক্রেতা-বিক্রেতাদরে ভোগান্তি পোহাতে না হয় সেজন্য মাটি দিয়ে গলিগুলো উঁচু করে শেড বানিয়ে দেওয়া হবে। আশা করছি- রমজানে বিনা ভোগান্তিতে ফুটপাত ও সড়কে নগরবাসী এবং পথচারীরা হাঁটতে পারবেন।