
দুই দিনের ব্যবধানে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় । এর মধ্যে তিনটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী ও একটি ঢাকায় ছিল। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে একটি এবং শনিবার (২২ নভেম্বর) দিনের বিভিন্ন সময়ে তিনটি ভূমিকম্প হয়, যার ফলে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য বলছে, বছর বছর দেশে ভূমিকম্পের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক কম্পনগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে—বাংলাদেশের ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে ফেলেছে, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহন বলা হচ্ছে। নরসিংদীর মাধবদীতে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৭। ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই একই এলাকায় ফের ৩ দশমিক ৩ মাত্রা ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পাশাপাশি জনগণকে আরও ব্যাপকভাবে সচেতন করা, প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি রাখা, নিয়মিত মহড়া আয়োজন এবং অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনার মতো পদক্ষেপও অত্যন্ত প্রয়োজন।
এদিকে বাড়তে থাকা ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় সরকারও সক্রিয় হয়েছে। সোমবার (২৪ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম জানিয়েছেন, রাষ্ট্রের বর্তমান সক্ষমতা যাচাই, বড় ধরনের ভূমিকম্প মোকাবিলার প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও আশপাশের অঞ্চলে ২৮টি ভূমিকম্প রেকর্ড হয়। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১-এ, আর ২০২৪ সালে আরও বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫৪টি। সবশেষ মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ৪ দফা ভূকম্পন বিশেষ উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন আখতার মনে করেন, সাম্প্রতিক ভূকম্পনগুলো প্রমাণ করছে—দেশের ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলো আরও শক্তি সঞ্চয় করেছে। তার মতে, এখনই স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে ভূমিকম্প মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
তিনি বলেন, ভূমিকম্পের সঠিক সময় বা স্থান আগে থেকে নির্ভুলভাবে বলা না গেলেও কিছু সহজ প্রস্তুতি প্রাণহানি কমাতে পারে—ঘরবাড়িকে নিরাপদ করা, জরুরি সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করা। এসবই দুর্যোগের সময় জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখে।