
কামাল হোসেন মিঠু:: সিলেট থেকে ঢাকাগামী ট্রেনে প্রতিদিন হাজারো যাত্রী চলাচল করলেও সেবার মান নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। জয়ন্তিকা, উপবন, কালনি ও পারাবত এক্সপ্রেস সিলেট থেকে ঢাকা ও ঢাকা থেকে সিলেট যাতায়াত করলেও অনিয়ম, ভোগান্তি ও দুর্নীতির অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে।
উপবন এক্সপ্রেস: দাঁড়িয়ে যাত্রা, টিটির অনিয়ম-উপবন এক্সপ্রেসে টিকিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রা শুরু করতে হয়েছে অনেককে। বগির ভেতরে গাদাগাদি করে যাত্রী উঠানামা চলেছে সায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত। টিকেট পরীক্ষক (টিটি) বগিতে এলেও প্রকৃত যাত্রীদের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে নামধারী কিছু লোকের সঙ্গে কথা বলে চলে যান। পরে খাবারের বগির পেছনে বসে হিসাব চুকিয়ে আরাম করে বসতে দেখা গেছে টিটিকে।
বিশেষ করে সায়েস্তাগঞ্জের পরের স্টেশন গুলোতে যাত্রীদের ভিড় এতটাই বেড়েছে যে পা ফেলার জায়গা পর্যন্ত ছিল না। অধিকাংশ যাত্রী টিকিটবিহীন, অথচ টিটিরা নামমাত্র খাতির করে যাত্রীদের থেকে সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
কালনি এক্সপ্রেস: আসন সংকট ও যাত্রী ভোগান্তি-কালনি এক্সপ্রেসে যাত্রীদের ভিড় আরও তীব্র। বিমানবন্দর স্টেশনে উঠার সময় ধাক্কাধাক্কিতে অনেকে আহত হন। নির্ধারিত আসনে গিয়ে দেখা যায় আসন দখল করে বসে আছেন অচেনা দুজন। টিটি ডেকে আনলে প্রথমে আসন খালি হলেও পরে তারা নিজেদের ‘স্টাফ’ পরিচয় দিয়ে গা-ঢাকা দেন।
অনেক দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী কোনো টিকিটই পাননি। হাতে ডিজিটাল মেশিন থাকা সত্ত্বেও টিটিরা কেবল সুবিধাভোগী যাত্রীদের টিকিট কেটেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে থামতেই দেখা যায়—অর্ধেকের বেশি যাত্রী নেমে যাচ্ছেন, যাদের বেশিরভাগের টিকিট ছিল না।
পণ্য পরিবহনেও গোপন বাণিজ্য-মধ্যরাতে শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে থামলে দেখা যায় ট্রেনের ইঞ্জিনে কয়েকজন যাত্রী ও পণ্য বোঝাই বস্তা। ইঞ্জিনচালক নিজে নেমে পণ্য নামানোর পর অর্থ লেনদেন করে আবার ইঞ্জিনে উঠে বসেন।
সর্বত্র অনিয়ম-যাত্রীরা অভিযোগ করছেন—খাবারের বগির বিক্রেতা থেকে শুরু করে টিটি ও ইঞ্জিন চালক পর্যন্ত সবাই যাত্রীসেবার চেয়ে পকেট গরমেই বেশি ব্যস্ত। ফলে ট্রেনে চলাচল এখন সাধারণ যাত্রীদের জন্য ভোগান্তির আরেক নাম।
রেলওয়ের টিকিট সংকট ও ভোগান্তি –
টিকিট কাউন্টারে গেলে প্রায়ই বলা হয়—নাই, দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট কাটতে পারেন। অথচ একটু সেই একই কাউন্টার থেকে মিলছে টিকিট!
এই দুই আসনের টিকেট বিমানবন্দর স্টেশন থেকে এক হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হয় আমাকে।
টিকের মূল্য দেখে বাড়তি টাকা চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কাউন্টারের লোক বলে নিলে নেন নাইলে জান!
অনলাইনে টিকিটের অবস্থাও ভিন্ন নয়। বারবার ওয়েবসাইটে ঢুকলেও দেখা যায়—এক সপ্তাহ পর্যন্ত কোনো টিকিট নেই। অনেক সময় সেই মেয়াদ আরও দীর্ঘ হয়। কিন্তু আশেপাশে পরিচিত কেউ থাকলে অনলাইনের টিকিটও সহজেই পাওয়া যায়। সমস্যাটা হলো—সেই টিকিট আবার যাত্রীর নিজস্ব জাতীয় পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড)-এর সঙ্গে মেলে না। ফলে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে বাড়তি দাম দিয়ে সেই টিকিট কিনতে বাধ্য হন।
গন্তব্যে পৌঁছানোর পর দেখা দেয় আরেক বিড়ম্বনা। স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা টিটিগণ টিকিট পরীক্ষা করেন, নাম-ঠিকানা যাচাই করেন। তখন অনলাইনের টিকিট কালোবাজার থেকে কিনে যাত্রীরা পড়েন নানা প্রশ্নের মুখে। অথচ যাত্রীরা তো টিকিটের জন্য মূল্য পরিশোধই করেছেন!
তাহলে প্রশ্ন হলো—দোষ কি যাত্রীদের, নাকি সেই সিন্ডিকেটের? যারা সুযোগ বুঝে আগেই টিকিট কেটে মজুত রাখে এবং পরে বাড়তি দামে বিক্রি করে যাত্রীদের জিম্মি বানায়।
ভিডিও লিংক— ঢাকা থেকে সিলেট, ট্রেনে আসন থেকে যাত্রী বেশি – সময় মত স্টেশনে না এসে দেরি করে আসে