
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বৈধ ভিসাধারী প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি বিদেশির তথ্য নতুন করে যাচাই-বাছাই করছে ট্রাম্প প্রশাসন।
এই বিদেশিদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে।
সম্প্রতি মার্কিন বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) একটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাধারীই সার্বক্ষণিক নজরদারির আওতায় থাকেন। যদি দেখা যায় যে কেউ ভিসার নিয়ম ভেঙেছে কিংবা ভিসার যোগ্য নন, তাহলে তার ভিসা বাতিল করা হবে। আর তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন, তবে তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
গত জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অবৈধ অভিবাসন দমনে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু অবৈধ নয়, অনেক ক্ষেত্রে বৈধভাবে থাকা অভিবাসীরাও মার্কিন প্রশাসনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
এদিকে বিদেশি ট্রাকচালকদের জন্য ভিসা ইস্যু সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর যুক্তি, বিদেশি চালকেরা মার্কিন নাগরিকদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছেন এবং স্থানীয় চালকদের কাজ নষ্ট করছেন।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা আবেদনকারীদের ওপরও অব্যাহতভাবে নতুন নতুন বিধিনিষেধ ও শর্ত আরোপ করে চলেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এসব নিয়মের মধ্যে সরাসরি সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়ার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।
এই নজরদারি মূলত ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে চালু করা হয়েছিল। পরে সেটিকে আরও সম্প্রসারণ করা হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, জননিরাপত্তার জন্য হুমকি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা করার মতো বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এজন্য আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর রেকর্ড, অভিবাসন নথিপত্র এবং অন্য যেকোনো তথ্যও বিবেচনায় নিয়ে থাকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এমনকি ভিসা দেওয়ার পর নতুন কোনো তথ্য সামনে এলে সেগুলোও খতিয়ে দেখা হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপের আওতায় ভিসাধারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট, নিজ দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও অভিবাসন-সংক্রান্ত রেকর্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে মার্কিন আইন ভঙ্গের যেকোনো তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এছাড়া অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব ভিসা আবেদনকারীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করা হবে। পাশাপাশি ভিসা সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হওয়ার সময় আবেদনকারীদের মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা অ্যাপের গোপনীয়তা (প্রাইভেসি) সেটিংস বন্ধ রাখতে হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্যমতে, হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ওই ছয় হাজার ভিসার মধ্যে প্রায় চার হাজার ভিসা বাতিল হয়েছে সরাসরি আইন ভঙ্গের কারণে। এছাড়া সন্ত্রাসবাদে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে বাতিল হয়েছে আরও ২০০ থেকে ৩০০ ভিসা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন একের পর এক কঠোর পদক্ষেপের কারণে দিন দিন ‘সোনার হরিণ’ হয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা।