
সিলেটের পাথর লুটকাণ্ডে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দুদকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ লুটপাটে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি), পুলিশ সুপার (এসপি), থানার ওসি এমনকি বিজিবির সদস্যরাও এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
দুদকের তথ্যমতে, অবৈধভাবে অন্তত ৪ কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে, যার বাজারমূল্য কয়েকশ কোটি টাকা। শুধু কমিশন বাবদ স্থানীয় প্রশাসনের পকেটে ঢুকেছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী, প্রতি ট্রাকে ৫০০ ঘনফুট করে পাথর বহনের জন্য প্রয়োজন হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার ট্রাক। প্রতিটি ট্রাক থেকে পুলিশের জন্য ৫ হাজার এবং প্রশাসনের জন্য ৫ হাজার টাকা নির্ধারিত ছিল।
প্রশাসনের ভূমিকা
সাবেক জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ: দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
চারজন ইউএনও (আজিজুন্নাহার, মোহাম্মদ আবুল হাসনাত, উর্মি রায় ও আবিদা সুলতানা): দায়িত্বকালে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে নামমাত্র ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান: থানা পুলিশের সঙ্গে মিলে অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত কমিশন নিয়েছেন।
পুলিশ প্রশাসন: অবৈধ ট্রাক আটক না করা, অভিযান না চালানো এবং উত্তোলনে বাধা না দেওয়ার শর্তে টাকা নিয়েছে।
বিজিবি: লুটের এলাকায় টহল পোস্ট থাকার পরও সক্রিয়ভাবে বাধা না দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে।
অন্যান্য সংশ্লিষ্টতা
খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
নদী ও পর্যটন এলাকা থেকে পাথর তুলে প্রথমে স্থানীয় ক্রাশার মেশিনে জমা করা হয় এবং পরে ভাঙিয়ে দেওয়া হয়, যাতে প্রমাণ মুছে ফেলা যায়।
রাজনৈতিক দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ও অনেক ব্যবসায়ীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তদন্ত ও ব্যবস্থা
দুদক ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এবং অনুসন্ধানের সুপারিশ করেছে।
ঘটনায় সিলেটের ডিসি শের মাহবুব মুরাদ ও কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ পাঁচ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যাদের ১০ দিনের মধ্যে দায়ীদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও পাথর উত্তোলনে প্রশাসনের প্রশ্রয় ও দায়িত্বহীনতার কারণেই ভোলাগঞ্জ, জাফলং, বিছনাকান্দি ও উৎমাছড়ার মতো পর্যটন এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের মাধ্যমে পরিবেশ ও পর্যটন স্থানের নান্দনিকতাও ধ্বংসের মুখে পড়েছে।
সূত্র-সকালের সময়