
মহানগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টে অনৈতিক কর্মকাণ্ড আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।
সন্ধ্যা নামলেই নগরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হোটেলগুলোর আড়ালে শুরু হয় অসামাজিক কার্যকলাপ, যা গভীর রাত পর্যন্ত চলে।
সিলেট নগরীর মিরাবাজার এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে ইদানিং অসামাজিক কার্যকলাপ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই অভিযান হচ্ছে। আটক হচ্ছে জড়িত তরুণ-তরুণী ও নারী-পুরুষ। স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক মহলে এই পরিস্থিতি ঘিরে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে।
অভিযোগ রয়েছে, নগরীর শিবগঞ্জ, মিরাবাজার, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, তালতলা, শেখঘাট, কাজলশাহ, মেডিকেল রোড, দক্ষিণ সুরমা এবং লাউয়াই এলাকায় অবস্থিত একাধিক হোটেল ও রিসোর্টে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে।
নগরবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও তা অনেক সময় ‘আইওয়াশ’-এ সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই হোটেলগুলোতে আবারও পুরনো কর্মকাণ্ড শুরু হয়। তারা মনে করেন, প্রশাসনের নিয়মিত ও কঠোর নজরদারি ছাড়া এ পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কিছু হোটেল এখন অনৈতিক কাজের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, কিছু রিসোর্টে ছাত্র-ছাত্রীদের জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে, যা সামাজিকভাবে ব্যাপক বিতর্ক ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক ১১টা ও রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পৃথক পৃথক অভিযানে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘তালহা গেস্ট হাউজ ও সিলেট রেস্ট হাউজ’ আবাসিক হোটেলে অভিযান দিয়ে ৩ জন পুরুষ ও ৩ জন নারীসহ মোট ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযানে সিলেট নগরীর মিরাবাজারস্থ হোটেল জাহানে অনৈতিক কাজের দায়ে এক তরুণ-তরুণীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত তরুণের নাম পঙ্কজ বিশ্বাস (৩০) ও তরুণীর নাম মৌমিতা রানী দাস (১৯)। হোটেল জাহানের ২য় তলার ২০৪ নম্বর কক্ষ থেকে তাদেরকে আটক করে পুলিশ।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে সিলেট মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অভিযানে শাহপরাণ থানার শিবগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত আবাসিক হোটেল গ্র্যান্ড সাউদা-এর তৃতীয় তলার একটি কক্ষে অভিযান চালিয়ে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে এক নারী ও এক পুরুষকে আটক করা হয়েছে। আটকৃতরা হলেন মাজিদুর রহমান (৪০) ও জেসমিন আক্তার (২০)।
তালহা গেস্ট হাউজ থেকে আটককৃতরা হলেন- আলাউদ্দিন (৫০), রেজাউল করিম নোমান (২০), ইয়াসমিন বেগম (২৫)। অন্যদিকে সিলেট রেস্ট হাউজ থেকে আটককৃতরা হলেন- ইভা রহমান নুপুর (২২), জোবাইদা ইসলাম জুই (২৪), হৃদয় আহমেদ (২৫)। আটককৃতদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী মডেল থানার নন –এফ আই আর নং ৩৫৬ এবং দক্ষিণ সুরমা থানার নন –এফ আই আর নং ১৭৩, তারিখঃ০৯/০৯/২০২৫খ্রিঃ ধারা-সিলেট মহানগরী আইন ২০০৯ এর ৭৭ রুজু হয় ।
শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেল পৌণে তিনটা থেকে পৌণে ৫টা পর্যন্ত ওসমানী মেডিকেল এলাকার ‘হোটেল বাধন’ ও নগরীর হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বর এলাকার ‘ঢাকা প্যালেস হোটেলে’ অভিযান পরিচালনা করে আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কাজে অভিযোগে পৃথক পৃথক অভিযানে ৯ নারী-পুরুষকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন, জামাল মিয়া (৩২, ম্যানেজার), মাইন উদ্দিন (২০), তাহলিল আহমেদ (২৩), মাহি আক্তার (২৫) ও কলি বেগম (২৩)। ঢাকা প্যালেস থেকে আটককৃতরা হলেন, মো. আসাদুজ্জামান (২৬), মো. ফাহিম আহমদ (২৬), জান্নাতুল ফেরদৌস (২৫), ও মনি আক্তার (১৯)।
রবিবার (১৭ আগস্ট) মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ দুপুর সোয়া ২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর ওসমানী মেডিকেল কলেজ রোডে অভিযান চালিয়ে আবাসিক হোটেল ‘বাধন’ থেকে দুই নারী ও দুই পুরুষকে আটক করা হয়। তারা হলেন, এমডি এহসান আহমেদ আসিফ (২৬), মো. আলী (৩২, হোটেল স্টাফ), নয়ন তারা ওরফে তানিয়া (২০) ও রুনা বেগম (২৫)।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের আরেকটি অভিযানে নগরীর দক্ষিণ সুরমা থানার কদমতলীর আবাসিক হোটেল ‘ঢাকা প্যালেস’ থেকে ওই যুবক যুবতিকে আটক করা হয। আটককৃতরা হলেন সুমন্ত পাল (৩০) ও রাজিয়া বেগম (২৫)।
সোমবার (১১ আগস্ট) বেলা ১ টার দিকে সিলেট নগরীর মিরাবাজারস্থ আবাসিক হোটেল ‘গ্র্যাণ্ড মাফী’তে সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে হোটেলের বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশী করে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জন তরুণ ও ৩ জন তরণীসহ মোট ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন, চয়ন দেব (২২), ছাহির আলী সামী (২২), ইমরান খান (২৫), তৃষা ভট্টাচার্য (২০), সুমাইয়া বেগম (২০), মাহিয়া সুলতানা মেহেদী (১৮)। উক্ত ঘটনার বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার নন এফআইআর নং-৩২১, তারিখ-১১/০৮/২০২৫ খ্রিঃ ধারা-সিলেট মহানগরী পুলিশ আইন, ২০০৯ এর ৭৭ রুজু হয়। আটককৃতদেরকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন- সৈয়দ রিয়াদ আহম্মদ (২৩), হোটেল গ্র্যাণ্ড মাফির ম্যানেজার রাতুল দাস (২৪), সম্পা বেগম (২৭), জান্নাতুল ফেরদৌসি জয়া (২৭), রারিয়া খানম (২৫), মোরছানা আক্তার (২৬)।
একই দিন বেলা পৌনে ৪টার দিকে সিলেট নগরীর মিরাবাজারের ‘গ্র্যাণ্ড মাফি’ হোটেলের বিভিন্ন কক্ষে অভিযান পরিচালনা করে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ জন পুরুষ ও ৪ জন নারীসহ মোট ৬ জনকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধ দমনে পুলিশ সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানের পাশাপাশি পোশাকধারী পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত ২ মাসে যাদেরকেই আটক করা হয়েছে তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।’ তিনি আরোও বলেন, ‘শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরাণ (রহ.) এর পবিত্র মাটিতে এসকল অনৈতিক কাজকর্ম রুখতে প্রশাসন সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। সিলেটের সকল এলাকাগুলোতে থানাপুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।