
জাফলং সাদাপাথরসহ ছয়টি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রকে ঘিরে এক যুগান্তকারী মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। দেশের পর্যটন শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা, স্থানীয় অর্থনীতিতে গতি আনা এবং কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যেই এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পরিদর্শনকালে তারা কমিটির সদস্যরা সাদাপাথর, জাফলং ও আশপাশের অঞ্চল ঘুরে দেখেন পর্যটনকেন্দ্রগুলোর বর্তমান অবস্থা, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রাসহ মাঠপর্যায়ে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ‘সিলেট পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান কমিটি’ সরেজমিনে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন এলাকা পরিদর্শন করে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. বজলুর রশিদকে কমিটির সভাপতি করে গঠিত এ কমিটিতে পরিবেশ বিজ্ঞান, স্থাপত্য, নগর পরিকল্পনা, পর্যটন ব্যবস্থাপনা এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমিটির সদস্যরা বলেন, ‘আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। যাতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষিত থাকে, স্থানীয়রা উপকৃত হন এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকরা উন্নত অভিজ্ঞতা পান। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পর্যটনকেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন, পর্যটকদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ এবং স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই এ মহাপরিকল্পনার মূল লক্ষ্য।’ তারা আরও জানান, ‘পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে। পরিকল্পনায় জলাভূমি, নদী, পাহাড় ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’
বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ‘মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, পর্যটকদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যেমন উন্নত সড়ক যোগাযোগ, পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সেবা, পরিচ্ছন্নতা এবং তথ্যসেবা কেন্দ্র গড়ে তোলার সুস্পষ্ট রূপরেখা থাকবে। বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো তৈরি এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে উপস্থাপন করার ব্যবস্থা থাকবে। একই সঙ্গে ‘ইকো-ট্যুরিজম’ এবং ‘কমিউনিটি-বেইজড ট্যুরিজম’ মডেলের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হবে, যাতে স্থানীয় বাসিন্দারা সরাসরি উপকৃত হন।
পরিদর্শনকালে স্থানীয় ব্যবসায়ী, পরিবহনকর্মী, গাইড এবং সাধারণ বাসিন্দারা এই মহাপরিকল্পনাকে স্বাগত জানান। তাদের মতে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে পর্যটন মৌসুমে স্থানীয় অর্থনীতি অনেক বেশি চাঙা হবে এবং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি হবে। তাদের প্রত্যাশা, এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সিলেট হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনগন্তব্য।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সিলেটকে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে এই মহাপরিকল্পনা একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এখন অপেক্ষা বাস্তবায়নের, যাতে শুধু সিলেট নয়, পুরো দেশই এই পর্যটন থেকে উপকৃত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকার একজন হোটেল মালিক বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই উন্নত পর্যটন ব্যবস্থার অপেক্ষায় ছিলাম। এখন যদি পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে এখানকার হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য বদলাবে।’