
রাইজিংসিলেট- ২৮ সেপ্টেম্বর ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের’ পর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকটে পড়লেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে অনুষ্ঠিত ‘এনআরবি কানেক্ট ডে: এমপাওয়ারিং গ্লোবাল বাংলাদেশিজ’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “দেশের অর্থনীতি প্রায় ধসে পড়ার পথে ছিল। সেই সময় প্রবাসীদের রেমিট্যান্সই আমাদের অর্থনীতিকে বাঁচিয়েছে এবং এখন তা পুনর্গঠনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের সামনে এখনো অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে তরুণ জনশক্তির বিশাল ভাণ্ডার। বিদেশি কোম্পানিগুলো চাইলে এই মানবসম্পদ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে একটি উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করতে পারে।”
প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আপনারা বাংলাদেশেরই অংশ। আত্মবিশ্বাস নিয়ে দেশে বিনিয়োগ করুন, নতুন ধারণা নিয়ে আসুন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে।”
তিনি আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, “নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো সমুদ্রবন্দরবিহীন। আমরা যদি তাদের জন্য সমুদ্রপথ উন্মুক্ত করি, তাহলে গোটা অঞ্চল উপকৃত হবে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশই হবে আঞ্চলিক কেন্দ্র।”
সামুদ্রিক সম্পদ ও অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা
অধ্যাপক ইউনূস জানান, বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ইতোমধ্যে বহু অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কক্সবাজার-মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রবাসীদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ সরাসরি শোনা হয়
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানান, বিভিন্ন অর্থনৈতিক পদক্ষেপের ফলে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই-অগাস্ট গণআন্দোলনের পর প্রবাসীদের ভূমিকা ছিল অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে ‘হারনেসিং ডায়াসপোরা অ্যাজ আ ন্যাশনাল অ্যাসেট’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ও বিশেষজ্ঞরা। বক্তারা প্রবাসীদের অভিজ্ঞতা, বিনিয়োগ এবং দেশের উন্নয়নে তাদের ভূমিকা নিয়ে মতামত দেন।
প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সংযোগ
অনুষ্ঠানে একটি নতুন অ্যাপ্লিকেশন ‘শুভেচ্ছা অ্যাপ’ উদ্বোধন করা হয়, যা প্রবাসীদের সঙ্গে দেশের সংযোগ আরো জোরদার করবে বলে আয়োজকরা আশা প্রকাশ করেন।
বহুমুখী অংশগ্রহণ
বিভিন্ন পেশাজীবী, উদ্যোক্তা, গবেষক, চিকিৎসক ও প্রযুক্তিবিদসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি এই আয়োজনে অংশ নেন। দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রবাসীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং সরাসরি নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করাই ছিল এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য।