রাইজিংসিলেট- বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতীক বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিচয়চিহ্ন। এটি শুধু একটি চিহ্ন নয়, বরং দলের আদর্শ, ইতিহাস ও জনগণের সঙ্গে আত্মিক সংযোগ তৈরির মাধ্যম। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ‘শাপলা’ ফুলকে দলীয় প্রতীক হিসেবে চেয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছে। আর এখান থেকেই শুরু হয় নতুন বিতর্ক।
শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকের কেন্দ্রীয় উপাদান। সংবিধানের ৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতীয় প্রতীকের মূল চিহ্ন হলো পানিতে ভাসমান শাপলা, যার চারপাশে রয়েছে ধানের শীষ, পাট পাতা ও তারকা। নির্বাচন কমিশনের মতে, জাতীয় প্রতীকের মর্যাদা রক্ষায় শাপলাকে রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়।
এনসিপির পাল্টা যুক্তি, তারা জাতীয় প্রতীক নয়, বরং জাতীয় ফুল হিসেবে শাপলাকে চেয়েছে। তাদের দাবি, শাপলা নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি এবং জনগণের আবেগের প্রতীক। তারা প্রশ্ন তুলেছে—যদি ধানের শীষ জাতীয় প্রতীকের অংশ হয়েও একটি দলের প্রতীক হতে পারে, তাহলে শাপলা কেন নয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় প্রতীকের অলঙ্করণ—যেমন ধানের শীষ বা পাট গাছ—তাদের আলাদা প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যায়, কারণ এগুলো মূল প্রতীক নয়। কিন্তু শাপলা সেই প্রতীকের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় সেটি স্পর্শকাতর।
বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতীক যেমন নৌকা, ধানের শীষ, বা লাঙ্গল—সবই গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এনসিপির শাপলা প্রতীক চাওয়াও এই আবেগের জায়গা থেকেই। তবে বাস্তব রাজনীতিতে প্রতীক নয়, বরং নেতৃত্ব, নীতি ও সংগঠনই ভোটারদের সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—জাতীয় গাছ বা জাতীয় ফল যদি দলীয় প্রতীক হতে পারে, তাহলে জাতীয় ফুল কেন নয়? এ বিতর্ক থেকে মুক্তি পেতে হলে নির্বাচন কমিশনের উচিত একটি স্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা, যেখানে উল্লেখ থাকবে কোন জাতীয় উপাদান রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে ব্যবহারযোগ্য আর কোনটি নয়।
শেষ কথা হলো, প্রতীক গুরুত্বপূর্ণ হলেও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত নীতি, নেতৃত্ব এবং জনসেবার ভিত্তিতে—not শুধু প্রতীকের আবেগ দিয়ে।