
রাইজিংসিলেট- শেকৃবির টিএসসি: শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, এখন যেন ‘ভাড়া কেন্দ্র’। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা অত্যাধুনিক ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। পরিকল্পনা ছিল, এটি হবে শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক, সৃজনশীল ও সংগঠনিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু নির্মাণের চার বছর পরও এটি শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ণাঙ্গভাবে উন্মুক্ত হয়নি।
এর পরিবর্তে এখন নিয়মিত চলছে বিয়ে, রিসেপশন ও বিভিন্ন ধরণের বহিরাগত অনুষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত টিএসসিতে ২৪টি অনুষ্ঠানের মধ্যে ১৩টিই ছিল বিয়ে ও সরকারি-বেসরকারি প্রোগ্রাম—যার সাথে শিক্ষার্থীদের কোনো সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, টিএসসি শুধু একটি ভবন নয়, বরং এটি হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের ক্লাব, সভা, সেমিনার, সাহিত্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জায়গা। কিন্তু এখন এই ভবনটি যেন এক ধরনের কমিউনিটি সেন্টারে পরিণত হয়েছে।
এক শিক্ষার্থী নাহিদ মাহমুদ বলেন, “টিএসসি এখন ছাত্র-শিক্ষকের কেন্দ্র না হয়ে ভাড়ায় দেওয়া অনুষ্ঠানস্থল হয়ে গেছে। ক্লাবের জন্য কোনো কক্ষ নেই, অথচ বাইরের মানুষ বিয়ে করতে পারছে—এটা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক।”
শাহিন আহমেদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের পর ভাড়া দেওয়া উচিত। তাছাড়া বাইরের অনুষ্ঠান শেষ হলে জায়গাগুলো অপরিচ্ছন্ন থাকে, যা পড়ালেখার পরিবেশকে ব্যাহত করে।”
ক্লাবগুলোর অভিযোগ, তারা নানা কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হচ্ছেন কাফেটেরিয়া বা খোলা জায়গায়। বাঁধন, সাহিত্য সংসদসহ সামাজিক সংগঠনগুলো বলছে, অফিস কক্ষ না থাকায় তারা প্রয়োজনীয় উপকরণ সংরক্ষণ বা নিয়মিত কার্যক্রম চালাতে পারছেন না।
বাঁধনের সভাপতি আফিকুল ইসলাম রাহি বলেন, “আমরা রক্তদানের কার্যক্রম পরিচালনা করি, কিন্তু রি-এজেন্ট সংরক্ষণের মতো একটি ছোট্ট ফ্রিজ রাখারও জায়গা নেই, কারণ কোনো অফিস কক্ষ আমাদের নেই।”
শেকৃবি সাহিত্য সংসদের সভাপতি মেহেদী আকাশ জানান, “আমাদের একটি ৪০০ বইয়ের ছোট লাইব্রেরি আছে এবং নিয়মিত সাহিত্যসভা করি। কিন্তু ঘর না থাকায় কখনো খোলা জায়গায়, কখনো অন্যত্র গিয়ে কার্যক্রম চালাতে হয়—বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব আয়োজন ভেস্তে যায়।”
এই বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ জানান, “টিএসসিকে শিক্ষার্থীবান্ধব করার জন্য নতুন করে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ডিজাইনারের সঙ্গে আলোচনা চলছে, কিন্তু বড় বাজেট না পাওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে।”
শিক্ষার্থীদের দাবি—টিএসসি প্রথমে শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত ও কার্যকরভাবে উন্মুক্ত করা হোক। অতিরিক্ত সুযোগ থাকলে তবেই বাইরের অনুষ্ঠান বিবেচনায় আনা যেতে পারে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র কেবল আয়ের উৎস নয়, এটি একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের কেন্দ্রবিন্দু।