
রাইজিংসিলেট- সিলেট অঞ্চলে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও চিকিৎসা অবকাঠামো ও জনবল সেই হারে বাড়েনি। প্রায় এক কোটি ১১ লাখ মানুষের জন্য পুরো বিভাগে রয়েছে মাত্র একটি রেডিওথেরাপি মেশিন, যা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চালিয়েও রোগীর চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।
রোগীর চাপ আর সীমিত সেবা
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়—অধিকাংশ রোগীকেই থেরাপি নিতে এক মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। একটি মেশিনে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ রোগীকে থেরাপি দিতে হচ্ছে। বছরের শুরুতে নতুন রোগীদের শিডিউল পেতে দুই–তিন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো, যদিও এখন তা কিছুটা কমেছে।
ঢাকায় থেরাপির চাপ বেশি হওয়ায় ভৈরব, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহসহ আশপাশের জেলা থেকেও অনেক রোগী সিলেটে আসছেন। এতে প্রতিদিনের ভিড় আরও বেড়ে যাচ্ছে।
মাথা–গলা ও নারীদের ক্যান্সারের প্রকোপ
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মাথা ও গলার ক্যান্সার—বিশেষ করে মুখগহ্বর, নাক, গলা ও থাইরয়েডের রোগীই সবচেয়ে বেশি। নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার ও জরায়ুমুখের ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। মাথা–গলার রোগীদের টানা ৩৩ দিন রেডিওথেরাপি নিতে হওয়ায় শিডিউল জট আরও বাড়ে।
তীব্র জনবল সংকট
বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে দীর্ঘদিন ধরে শুধু একজন সহকারী অধ্যাপক পুরো বিভাগ পরিচালনা করছেন। ছয়জন রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্ট থাকার কথা থাকলেও বেশ কিছুদিন ছিলেন মাত্র দুজন। সম্প্রতি অনারারি ভিত্তিতে আরও দুজন যোগ হওয়ায় কাজ কিছুটা এগিয়েছে।
যন্ত্রপাতির অবস্থা নাজুক
২০১৮ সালে স্থাপিত রেডিওথেরাপি মেশিনটি ২০২৪ সালের শুরুতে বিকল হয়ে চার মাস বন্ধ ছিল। মেরামতের পর আবার চালু হলেও যেকোনো সময় অচল হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবু রোগীর চাহিদা মেটাতে মেশিনটিই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে চালাতে হচ্ছে।
নতুন কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টারের অপেক্ষা
ওসমানী মেডিক্যালে ১০০ শয্যার আধুনিক ‘কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টার’-এর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেন্টারে চারটি রেডিওথেরাপি মেশিন স্থাপন করা হলে প্রতিদিন অন্তত ৬০০ রোগী থেরাপি নিতে পারবেন। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার পরিবর্তনের পর কাজের গতি কমে গেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কেন্দ্রটি চালু হলে শুধু সিলেট নয়, আশপাশের জেলাগুলোর রোগীরাও উন্নত সেবা পাবেন।
পরিচালকদের বক্তব্য
বিভাগীয় প্রধান ডা. সরদার বনিউল আহমেদ জানান, জনবল সংকটই বর্তমানে সবচেয়ে বড় বাধা। তিনজন শিক্ষকের জায়গায় তিনি একাই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তাঁর মতে, সক্ষমতার তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় শিডিউল পেতে দেরি হচ্ছে, যদিও আগের তুলনায় এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর এসে তাঁরা বিপুল রোগীর চাপ দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। গুরুতর রোগীদের আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, পাশাপাশি শূন্য পদ পূরণ ও নতুন ক্যান্সার সেন্টার চালুর উদ্যোগ চলছে।