সিলেট সদর ও নগরীতে অবৈধভাবে পাহাড়- টিলা কাটায় তৎপর সেলিম-বিলাল। এই দুই কুতুবের হাত ধরেই সাবাড় হচ্ছে বেশিরভাগ টিলা। জেলা প্রশাসকের নিষেধাজ্ঞা পরিবেশের মামলা ভ্রাম্যমাণ আদালতের দন্ডের পরও ঠেকানো যাচ্ছে না তাদের দৌরাত্ম্য। ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর অবৈধভাবে টিলা কাটার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে আবারও মামলা করেছে। তারও আগে একই অপরাধে বিলাল ভ্রাম্যমাণ আদালতের দন্ডে একাধিকবার জেল খাটেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানাধীন দুস্কি এলাকার সেলিম, পেশায় ছিলেন সিএনজি অটোরিক্সা চালক। সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন পাঠানটুলা শাখার সভাপতি পদে দায়িত্বপালনও করেছিলেন। একসময় সখ্যতা গড়ে ওঠে একই থানাধীন করেরপাড়া এলাকার ট্রাক চালক বিলাল মিয়ার সাথে। বিলাল ছিলেন নগরীর বাগবাড়ি এলাকার অজিত তালুকদার এর বিশ্বস্ত হাতিয়ার।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে অবৈধভাবে টিলা কাটায় আবির্ভূত হন অজিত। বিলাল অজিতের অন্যতম সহযোগী হওয়ায় সেলিম কে পাশে টেনে আনেন। তিনজন মিলে গড়ে তুলেন টিলা কাটার সিন্ডিকেট। তাদের শক্তিমত্তা বৃদ্ধিতে করের পাড়া এলাকার ছাত্রলীগ নেতা তানভীর কে দলে বেড়ানো হয়। তানভীরের প্রত্যক্ষ শেল্টার ও মদদে অবৈধভাবে টিলা কাটায় তারা নগরীর হাওলদার পাড়ার মজুমদার টিলা, জালালিয়া, সদর উপজেলার উপরপাড়া, দুস্কি, বড়গুল, বাটা, নালিয়া, মোহাম্মদি ও লাখাউড়ার টিলাগুলোতে রীতিমত তান্ডব চালান।
গত ২০২২ ও ২০২৩ সালে নগরীর ৮ নং ওয়ার্ড হাওলদার পাড়ার মজুমদার টিলায় অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। অজিত তালুকদারের বিরুদ্ধে হয় মামলা, অবৈধভাবে টিলা কাটার দায়ে আটক হন বিলাল, দন্ড সহ জরিমানা আরোপ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু বিলাল-সেলিমের টিলা কাটা থামে না!
গেল বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে গা-ঢাকা দেন ছাত্রলীগ নেতা তানভীর। অজিত কিছুটা থমকে গেলেও আড়ালে থেকে নাড়তে থাকেন কলকাটি। এসময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিতে থাকার সুযোগে, নগরীর ৩৭ নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদি এলাকায় অবৈধভাবে টিলা কাটা শুরু করে সেলিম-বিলাল সিন্ডিকেট। বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরে আসলে, অবৈধভাবে টিলা কাটার দায়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে সেলিম-বিলাল সহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে নগরীর জালালাবাদ থানায় মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদপ্তর। যার মামলা নং-১৩ তারিখ-১৬/০৯/২৫ইং।
উল্লেখ্য, এর আগে সিলেট জেলায় অবৈধভাবে পাহাড় ও টিলা কাটা বন্ধে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম গত ৯ সেপ্টেম্বর একটি অফিস আদেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
পরিবেশের মামলার পরও আইনকে তোয়াক্কা না করা সেলিম-বিলাল আবারও অবৈধভাবে টিলা কাটা শুরু করেন, হাওলদার পাড়ার মজুমদার টিলা কাটার পাশাপাশি জালালিয়া রাগিব রাবেয়া বিদ্যানিকেতন স্কুলের পাশে টিলা কেটে বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেন বিলাল। বুধবার ২৯ (অক্টোবর) সরেজমিন গিয়ে যার সত্যতা পাওয়া যায়।
এবিষয়ে, অজিত তালুকদারের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল করলে বন্ধ পাওয়া যায়, সেলিমের মুটোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। বিলাল অবৈধভাবে টিলা কাটার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া দন্ড জরিমানা এবং সাম্প্রতিক তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া নিশ্চিত করেন এবং হাওলদার পাড়ার মজুমদার টিলায় দুই শতক প্লটের ভিতর মাটি কাটা হয়েছে নিশ্চিত করলেও, জালালিয়ায় টিলা কেটে বাড়ি বানানোর বিষয়টি প্রতিবেদক জানতে চাইলেও এড়িয়ে যান।