সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: সারওয়ার আলাম বলেছেন, মায়ের ভাষার চেয়ে বিকল্প কিছু হতে পারে না। নিজের যা প্রকাশ করা যায় তা অন্য কোন ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। নিজের ভাষার প্রতি সব চেয়ে বেশে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ভাষা রয়েছে সেই সব ভাষার প্রতি গুরুত্ব ও আন্তর্জাতিক ভাষার প্রতি সম্মান জানাতে হবে। তিনি বলেন, সিলেটীদেরও নিজস্ব নাগরী ভাষা রয়েছে। নিজস্ব ভাষার চর্চা ও সম্মান বজায় রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট বিশ্বের সকল মাতৃভাষার সংরক্ষণ, পরিবর্ধন, পরিমার্জনের কাজ করে থাকে। এই ইনস্টিটিউট বিশ্বের সকল মাতৃভাষাকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
গতকাল শনিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত সিলেটে ‘লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথাগুলো বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ভাষা মানুষের পরম সম্পদ। মাতৃভাষা চর্চার মধ্য দিয়েই একটি জনগোষ্ঠী তার মনন, মেধা ও চিন্তা প্রকাশ করে। পৃথিবীতে অনেক মাতৃভাষা বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে এসব ভাষা সঠিকভাবে চর্চা না করলে তা মৃত্যুমুখে পতিত হবে। কাজেই বিপন্ন ভাষা চর্চা, অনুশীলন, পুনরুজ্জীবন, নথিবদ্ধকরণ আবশ্যক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এ কাজটিই করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হয়েছে যার উদ্দেশ্য বিশ্বের প্রতিটি মাতৃভাষা চর্চাকে উৎসাহিত করা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্বের সকল মাতৃভাষার সংরক্ষণ, পরিবর্ধন, পরিমার্জনের কাজ করে থাকে। এই ইনস্টিটিউট বিশ্বের সকল মাতৃভাষাকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। মাতৃভাষা সংক্রান্ত গবেষণামূলক কাজের পাশাপাশি প্রতিবছর লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাতৃভাষা চর্চা, প্রচার ও প্রসার ঘটানো ইনস্টিটিউটের মূল লক্ষ্য। ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রথম বারের মত লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড আয়োজন করে। এ বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট তৃতীয়বারের মতো দেশব্যাপী লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড আয়োজন করছে।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষাবিজ্ঞানী ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান এর সভাপতিত্বে ও লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড এর সদস্য-সচিব ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক (প্রশাসন) ড. খিলফাত জাহান মুবাইরাহ’র পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, লিঙ্গুইস্টিক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কালাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সিলেট অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন, সিলেট জেলা শিক্ষা অফিসার আবু সাঈদ মো: আব্দুল ওয়াদুদ, সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক হেপী বেগম।
এর আগে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০১৬ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে গতকাল ১ নভেম্বর শনিবার সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, সিলেটে লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন করা হয়। সকাল ৯টায় টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড সিলেট অঞ্চল পর্বের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি।
উদ্বোধক ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দের বক্তব্যের পর লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড এর সদস্য-সচিব এবং উপপরিচালক (প্রশাসন) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ড. খিলফাত জাহান যুবাইরাহ্ বলেন, এ বছর লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লাসহ ১০টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি অঞ্চল থেকে ক- ক্যাটেগরিতে ১০ জন করে মোট ১০০ জন এবং খ- ক্যাটেগরিতে ১০ জন করে মোট ১০০ জন ফাইনাল রাউন্ডে আগামী জানুয়ারি মাসে সুবিধামত সময়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিবে। ফাইনাল রাউন্ডে ২ ক্যাটেগরিতে ৩ জন করে মোট ৬ জন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট থেকে একুশের অনুষ্ঠানমালায় পুরস্কার গ্রহণ করবেন এবং ক ও খ ক্যাটেগরি থেকে প্রথম ২ জন এ বছর অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।
সিলেট অঞ্চলের প্রতিযোগিতায় ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি ক. ক্যাটেগরিতে ১৭০ জন এবং দশম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি খ- ক্যাটেগরিতে ৮.৫ জন শিক্ষার্থী এবং সর্বমোট ২০জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা ১ ঘন্টাব্যাপী লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড-এর নির্ধারিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
প্রশ্নের পর্বের পর সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। অতপর ফলাফল ঘোষণার মাধ্যমে সভাপতি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।