সিলেট আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ব্যারিকেড পার্টি’,আন্দোলনে ব্যবসায়ীরা,অভিযোগ ছাত্রলীগের দিকে ।
সিলেট মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার দিয়ে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান আটক করে চাঁদা আদায় করে ‘ব্যারিকেড পার্টি। আর চাঁদা না পেলে অস্ত্রের মুখে চালককে জিম্মি করে লুটে নেয় পণ্য।
ব্যবসায়ীরা ছাত্রলীগের দিকে পণ্যবাহী পরিবহন থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন। তবে ছাত্রলীগ নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই অবস্থায় সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ ও নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন সিলেটের ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ব্যবসায়ীরা বিষয়টি সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে অবগত করেন। তিনি সড়কে পণ্যবাহী পরিবহনের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। কিন্তু এই নির্দেশের পরও চাঁদাবাজি থামেনি। এরপর ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। কিন্তু বেপরোয়া চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজি থামেনি।
ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেটের কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় প্রচুর পরিমাণ শীতকালীন সবজি চাষ হয়। এসব সবজি প্রতিদিন ভোরে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট ও বন্দরবাজার পাইকারি আড়তে নিয়ে আসেন। ভোরে সবজি নিয়ে আসার সময় সিলেট-তামাবিল সড়কের হরিপুর, বটেশ্বর, মেজরটিলা, টিলাগড় ও সোবহানীঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির শিকার হন তারা। পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা দুর্বৃত্তরা হঠাৎ করে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার নিয়ে সড়কে ‘ব্যারিকেড’ দেন। এরপর গাড়ি আটকে তারা চাঁদা দাবি করেন। প্রতি গাড়ি থেকে তারা ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করেন। টাকা না পেলে অনেক সময় চালককে অস্ত্রেরমুখে জিম্মি করে গাড়ি ছিনতাই করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে পণ্য লুট করে নেন।
এমতাবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা জোটবদ্ধ হয়ে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। এসময় সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, সিলেট-তামাবিল সড়ক এখন মূর্তমান এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পণ্যবাহী পরিবহনগুলো নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে দুর্বৃত্তরা গাড়ি আটকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা না পেলে তারা পণ্য লুট করে নিচ্ছে। স্মারকলিপিতে ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের গ্রেফতার ও সড়কে পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল নির্বিঘœ করতে ৭ দিনের সময় বেঁধে দেন প্রশাসনকে।
সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবদুর রহমান রিপন বলেন, ‘সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে চাঁদাবাজির যন্ত্রণায় ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনকে একাধিকবার বিষয়টি অবগত করলেও ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। এসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামবে।’
তবে সড়কে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ।
তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজির সাথে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকার কোন প্রমাণ নেই। দুর্বৃত্তরা ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করলে এর দায় ছাত্রলীগ নিতে পারে না। এসব দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিলে এবং তাদেরকে গ্রেফতার করলে আসল পরিচয় উদঘাটন হবে।
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে চোরাইপথে প্রচুর পরিমাণে চিনি, কসমেটিক্স এবং গরু-মহিষ আসে। এসব চোরাই পণ্য ও প্রাণীবাহী ট্রাক আটকে ছাত্রলীগ পরিচয়ে চাঁদা আদায় করে কয়েকটি গ্রুপ। চোরাইপণ্য থেকে চাঁদা আদায় করে বেপরোয়া হয়ে ওঠা চক্রটি এখন কৃষকের সবজিবোঝাই ট্রাক থেকেও চাঁদা আদায় করছে। তাদের চাঁদাবাজি থেকে নিরীহ কৃষকরাও রেহাই পাচ্ছে না।