
সিলেটে সিটি কর্পোরেশনের দুর্নীতিবাজ দুই কর্মচারী আপন দুই ভাই সোহাগ আহমদ ও কবির আহমদের পিতা হান্নান মিয়া ১৯৯২ সালে চাঁদপুরের দক্ষিণ মতলব থানার পঁচারী গ্রাম থেকে জীবিকার তাগিদে পরিবার নিয়ে সিলেটে আসেন। কাজ শুরু করেন কাজির বাজারের হারুণ অ্যান্ড সন্দের সুপারির আড়তে দিনমজুরের কাজ সংসার চালাতেন তিনি। ৫ ছেলে মেয়ের বিশাল সংসার কোন ভাবে চালাতে না পারায় তৎকালীন সিসিকের স্বাস্থ্য শাখার প্রধান আলবাম চৌধুরীর মাধ্যমে মাত্র ১২০০ টাকা বেতনে বর্জ্য শাখায় মাষ্টার রুলে কাজ শুরু করেন সোহাগ আহমদ। তবে চতুর সোহাগ তৎকালীন হিসাবরক্ষণ শাখার প্রধান মো. মুহিবুর রহমানের অধিনে সুকৌশলে হিসাব শাখার পিয়ন হিসাবে কাজ শুরু করেণ। এতে টাকার বিনিময়ে তাকে সহযোগীতা করেন বর্জ্য শাখার প্রধান ও বর্তমান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান। যিনি সিটি কর্পোরেশনের সব চেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ হিসাবে সকলের কাছে পরিচিত। সোহাগ হিসাব রক্ষণ শাখায় যোগ দিলে পিতা হান্নান মিয়া সুপারির আড়তের কাজ ছেড়ে ২০০৭ নগরীর পশ্চিম ভাতালিয়া এলাকায় একটি মুদি দোকান শুরু করেন।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সোহাদের দুর্নীতি করে দুই ভাই শত কোটি টাকার মালিক। পরিবারকে। একে-একে সোহাগ তার ছোট ভাই কবির আহমদকে বর্জ্য শাখার সুপারভাইজার হিসাবে চাকরির সুযোগ করে দেন। তবে সিসিকে চাকরি পাইয়ে দেন, যা সিসিকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে রিতিমতো বতিমতো অসম্ভব অসম্ভব। ছোট ভাই কবির আহমদ ছিলেন ছিলেন স্থানীয় ভাবে যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িত। সেই সুযোগে সহজেই চাকরি পেয়ে যান সিসিকের বর্জ্য শাখায়। রাতারাতি হিসাব রক্ষণ শাখার অসাধু কর্মকর্তাদের বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন সোহাগ আহমাদ হয়ে যান প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরেক দূর্নীতিবাজ হানিফুর রহমান, চিফ ইঞ্জিনিয়ার নুর আজিজের আস্থাভাজন। নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে বেপরোয়া জীবন যাপন শুরু করেন সোহাগ। সরকারি প্রতিটি বিলে সোহাগের মাধ্যমে কমিশন নিতেন হিসাব রক্ষণ শাখার কর্মকর্তাঁধা। ২০১৩ সালে একটি রিট আবেদনের মাধ্যমে সোহাগসহ কয়োক জনের চাকতি স্থায়ী হয় সিটিতে। বর্তমানে হিসাব রক্ষণ শাখায় কর্মরত সোহাগের বেতন মাত্র ২৭-২৮ হাজার টাকা (সোহাগের দাবি ৩০ হাজার। এই সামান্য বেতনে চাকরি করে কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি তিনি। কি ভাবে কয়েক কোটি টাকার মালিকসহ একাধিক বাসা বাড়ির মালিক হলেন। তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হিসাবরক্ষণ শাখার একজন সাধারণ এমএলএসএস (পিয়ন) সোহাগ আহমেদ (৪০) ও তার ভাই কবির আহমদ বর্জ্য শাখার সুপারভাইজার গত কয়েক বছরে রহস্যজনক ভাবে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেলেন এমন প্রশ্ন এখন অনেকের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে দুই ভাইয়ের এই অভাবনীয় উত্থান সিসিকের অন্দরে এবং বাইরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তবে সোহাগ শুধু নিজের ভাইয়ের ঢাকরির বাবস্থা করেননি তিনি তার বোনের ছেলেকে দিয়েছেন সিসিকে চাকরি। সোহাগের নামে রয়েছে ঢাকার যাত্রা বাড়িতে ছয়তলা একটি বাড়ি, যে বাড়ির মালিক নিজের বোন জামাইদের বলে চালিয়ে দেন। বাসারটি অনুমান মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। ঢাকার গাজিপুরে রয়েছে একটি রিসেটি বহলা গাড়ি সেটির মূল্য প্রাপ্ত ২ কোটি টাকা। এ রকম তিনটি বাড়ি রয়েছে ঢাকায়। তবে চতুর সোহাগ সব সময় বলেন, এসব সম্পত্তি আর বোন জামাই সৌদি আরব গিয়ে করেছেন। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোহাগের কোন জামাই সৌদি আরবে যে ঢাকরি করতেন তা দিয়ে নিজের পরিবারই চলতোনা। আরেক বোন জামাই কাওরান বাজারের সবজির আড়তের ব্যবসায়ী। এখন সিলেট বন্দরবাজারস্থ করিম উল্লাহ মার্কেটের ৩য় তলায় একটি মোবাইল এক্সোসরিজের দোকান দিয়েছেন তিনি। তবে এই দোকানে সোহাগের বোন জামাইকে কখনো দেখা যায়নি। দোকানটির মালিক সোহাগ ও কবির। এই মার্কেটের ৩য় ও ৪র্থ তলায় সোহান কবিরের আরো ৪টি দোকানের পজিশন কিনা রয়েছে। ঐ মার্কেটের আরেকটি দোকানে বাবলা করে সোহাগের আরেক ভাই। এই চারটি দোকানের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকার উপরে। শুধু করিম উল্লাহ মার্কেটে নয়, সিলেট শহরের আরো একদিক মার্কেটে রয়েছে প্রায় ১০/১২ টি দোকানের মালিকানা সোহাগ ও করিরের।
সোহাগের গ্রামের বড়ি চাঁদপুরে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়, বানিয়েছেন পাকা দালান। সিলেটের পশ্চিম শেখঘাটের ১২ নং ওয়ার্ডের নবাব রোডে তার ৭ শতক জায়গার ওপর একতলা ভবন ও একটি টিনশেডের আবাসন নির্মাণ করেছেন সোহাগ ও কবির। এছাড়াও তাদের নামে-বেনামে আয়ও অনেক সম্পদ রয়েছে সিলেট নগরীতে। তবে চতুর সোহাগ যেই বাসায় এখন বসবাস করে সেটি তার পিতা এক বছরের জন্য জেলা প্রশাসকের কাজ থেকে লিজ নিয়ে ছিলেন বলে জানা যায়। সরকারি বিবি বর্হিভূত ভাবে সেখানে গড়ে তুলেছেন বিশাল পাকা বাড়ি। বিগত সরকারের আমলে বাড়ির জমিটি চলে যায় ডিসির খতিয়ানে। সরকারের পঠ পরিবর্তন হলে চতুর সোহাগ ও কবির টাকা বিনিময়ে বাড়ির ভামিটি আবারও ডিসি অফিস থেকে ঘুষের মাধ্যমে লিজ নিয়ে নিজেদের নামে নামজারি করে নিয়েছেন নলে স্থানীয়রা জানান। এসিকে সোহাগের ছোট ভাই কবির আহমদ বর্তমানে সিসিকের বর্জ্য শাখার সুপারভাইজার হিসাবে কর্মরত রয়েছে। তিনি নাকি মাত্র ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। কিন্তু তার নামেও আছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। যা অবৈধ ভাবে সিটি থেকে উপাজিত। বিগত ২০১৭ ইং সালে দুদকের করা একটি মামলার সিসিকের প্রভাবশালী কর্মকর্তা প্রশাসনিক ও বর্জা শাখার প্রধান হানিফুর রহমানসহ অনেকের নামের সাথে সোহাগের নাম ছিলো। কিন্তু যে সময় সোহাগ টাকা দিয়ে মামলার তদন্তকাজ থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে ব্যার্থ হয়ে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে নিজের মামলা থেকে কাটিয়ে নেন। এই মামলাটি এখনো তদন্তাধিন রয়েছে। এই মামলায় সোহাগসহ একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর নাম বেরিয়ে আসলেও নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান প্রশাসনিক শাখার প্রধান হানিফুর রহমান। এই মামলা থেকে অদৃশ্য খুঁটির জোরে কেটে যান সোহাগ, সেই মামলাটির অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। তবে একটি সুত্র জানায়, সোহাগ্য ও কবিরের নামে দুদতে নতুন করে একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে তাদের অবৈধ সম্পদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। যেটির কপি এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। সিলেট
সিটি করপোশনের গিয়ে জানা যায়, আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত বছরের ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে গেলে ছাত্রজনতার উপর হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী ছিলেন সিসিকেনা প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা কানাইঘাটের বাসিন্ধা সাবেক সচিবের ছেলে আ.ন.ম মনসুফ, সিসিকের চীফ ইঞ্জিনিয়ার নুর আজিজুর রহমান (বদনীভূত) সহ বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু সেই মামলা থেকে বাদীকে না জানিয়ে একটি এফিডেভিট দিয়ে সকলেই মামলা থেকে রক্ষা পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু উক্ত মামলার বাদী বিষয়টি জানতে পেরে সিলেট জেলা প্রশাসক বরাতরে লিখিত অভিযোগ করেন। যাতে তার মামলা থেকে কোন আলামীকে বাদ দেওয়া না হয়। সেই এপিটি হাতে আসলে দেখা যায়, আদালতে যে কাজন জাল এফিডেভিটে বেশ কয়েকটি দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নাম রয়েছে। যা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে। সিসিকে সাংবাদিকরা সোহাগের সম্পদের খবর দিতে গিয়ে বারবার সিটি কর্পোরেশনের যাওয়ার কারণে সোহাগ এখন ঠিকমতো অফিসে আসেন না। হবে বেতন ভাতা ঠিকই তুলে দিচ্ছেন সন্ধ্যার পর অফিসে এসে, হাজিরা দিয়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন অফিস থেকে, মাখায় পরছেন সব সময় টুপি। সোহাগের বাক্তিগত দুটি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও দুটিই বন্ধ পাওয়া যায়। আর তার ভাই করিয়ও নাকি সিটিতে এখন থেমন একটা আসেন না। তরে কবির আহমদকে সঙ্গ দিচ্ছেন আরেক যুবলীগ নেতা সাবেক আওয়ামী লীগের পালাতক আনোয়ারজ্জামানের গণিষ্ট্যজন হিসাবে পরিচিত সিটির বর্জ্য শাখার আরেক সুপারভাইজার সোহাগ। তিনি অবশ্য এখন বর্জ্য শাখার পাশপাশি ট্রাভেলস ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন। প্রিমিয় এখন কবিব ও সোহাগকে সব রকম শেল্টার দিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের আমলে এই সোহাগই সঙ্গ রকম শেল্টার দিতেন এই দুই ভাইকে। একজন যুবলীগ নেতা এখনো প্রকাশ্য আরেক যুবলীগ নেতাকে শেল্টার দিচ্ছেন, কিসের ক্ষমতায় প্রশ্ন অনেকের।
সিসিকের একাধিক কর্মচারী জানান, সাংবাদিক আসার খবর শুনলেই সোহাগ ও কবির পালিয়ে যান। এদিকে হিসাবরক্ষণ শাখার প্রধান আ.ন.ম মণসুফই হচ্ছেন সোহাগের সকল অপকর্মের গডফাদার। সাংবাদিক সোহাগের তথ্য নিতে গেলেই সিসিকের হিসাবরক্ষণ শাখার প্রধান আ.ন.ম মনসুফ সোহাগের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। তিনি সিলেটের বিচ্ছিন্ন সাংবাদিকের নাম বলে নিজের ক্ষমতার জানান দেওয়ার চেষ্টা করেন। নিজের এবং সোহাগের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ বন্ধ করতে তদবির শুরু করেন। কারণ সোহাগের অপকর্ম বের হলেই আ.ন.ম মনসুফের সকল অপকর্ম বেরিয়ে আসতে শুরু করবে। তবে সোহাগের এই বিস্ময়কর উত্থান এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো সিসিকের অভ্যন্তরে খ্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তার এই সম্পদের উৎস এবং এর পেছনে জড়িত অন্যান্যদের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সিলেটের সচেতন নাগরিকরা। (ধারাবাহিক) আগামীকাল পড়ুন সিসিকের দুই ভাইয়ের সম্পদের বিবরণীসহ প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মনসুফের নানা রকম অনিয়মের কাহিনী ।
সূত্র- দৈনিক পর্যবেক্ষণ