
ফজল উদ্দিন, ছাতক প্রতিনিধিঃসিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ থেকে পাগলাবাজার পর্যন্ত দীর্ঘদিন ধরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জমি দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য দোকানপাট ও অস্থায়ী স্থাপনা। ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে এবং পথচারীরাও দুর্ভোগে পড়েন। বিশেষ করে সড়কের দুই পাশ প্রায় সম্পূর্ণরূপে দখল হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষকে চলাচলের জন্য ব্যবহার করতে হতো মূল সড়কের গা ঘেঁষে, যা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে সৃষ্টি হচ্ছিল যানজট ও জনদুর্ভোগ। বিষয়টি নিয়ে হাইওয়ে পুলিশ সওজ বিভাগকে একাধিকবার চিঠি দিলে অবশেষে কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর, দুই দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়।
উচ্ছেদ অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এছাড়া অভিযানে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, হাইওয়ে পুলিশ সিলেট রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম এবং জয়কলস হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় সড়কজুড়ে গড়ে ওঠা দোকানপাট ও অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা।
তবে উচ্ছেদ অভিযান সফল হলেও এর স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ, মাত্র দুইদিনের ব্যবধানে আবারও অনেক ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ী পুরনো জায়গায় ফিরে এসে দোকান বসানো শুরু করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে আবার ওই স্থানে ফিরে এসেছেন। ফলে ফের দখলের আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
অন্যদিকে, সড়কে যানজট নিরসন এবং যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে ছাতকের জাউয়াবাজার এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের উদ্যোগে একটি অস্থায়ী ট্রাফিক বক্স নির্মাণ শুরু হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ট্রাফিক বক্সের মাধ্যমে নিয়মিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা তদারকি করা হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
সিলেট রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, “সড়ক জনসাধারণের জন্য। এখানে অবৈধভাবে দোকান বা স্থাপনা গড়ে তোলার কোন সুযোগ নেই। এই অভিযান চলমান থাকবে এবং কেউ যাতে পুনরায় দখল করতে না পারে, সে বিষয়েও কঠোর নজরদারি থাকবে।”
সড়ক দখলমুক্ত রাখতে প্রশাসনের এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে পুনঃদখল ঠেকাতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য যথাযথ পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ না করলে, এইসব উদ্যোগ স্থায়ী হবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। জনস্বার্থে উচ্ছেদের পাশাপাশি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিকল্পিত পুনর্বাসন এখন সময়ের দাবি।