
গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ, আত্মজৈবনিক, কিশোর সাহিত্য, গান-কবিতাসহ নানান স্বাদের লেখায় পাঠকের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি নির্মাণ করেছেন কালজয়ী অসংখ্যা নাটক ও সিনেমা। তিনি আর কেউ নন দেশের কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ।
গুণী এ মানুষটির ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার (১৯ জুলাই)। ২০১২ সালের আজকের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তাকে হারানোর বেদনায় বাংলাভাষী পাঠকদের মন এখনও শোকাচ্ছন্ন।
হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরেই তারকাখ্যাতি পেয়েছেন অনেক অভিনয়শিল্পীর। যাদের মধ্যে অন্যতম বিদ্যা সিনহা মিম। তার সিনেমায় পথচলা শুরু হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘আমার আছে জল’ সিনেমার মাধ্যমে। স্মৃতির পাতায় এখনও অমলিন সেইসব দিন।
একটা ঘটনা আজও আবেগে ভাসায় উল্লেখ করে মিম বলেন, একবার রাগ করে সারা রাত খাইনি। সকালবেলা স্যার জানতে পারলেন। আমাকে ডেকে পাঠালেন। প্রথমে যেতে চাইনি। তখন মাহফুজ আঙ্কেল বললেন— মা, চলো। গিয়ে দেখি স্যার বলছেন, খেয়ে নাও। আমি বললাম, খাব না। তিনি বললেন— তুমি না খেলে আমিও খাব না। এরপর আর না খেয়ে থাকতে পারিনি। এমন অসংখ্য স্মৃতি জমা আছে মনে।
মিম স্মৃতিচারণ করে বলেন, স্যারের সঙ্গে আমার কাজের অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ! তিনি আমাকে মেয়ের মতো দেখতেন। তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম। অভিনয়ও বিশেষ কিছু জানতাম না। খুব নার্ভাস লাগত। স্যার সেই নার্ভাসনেস দূর করতে নানা দুষ্টুমি করতেন। বলতেন, তোমার অভিনয় করতে হবে না, তুমি যেমন, ঠিক তেমনই থাকো।
মিম বলেন, স্যারের সঙ্গে যখন কাজ করি তখন স্কুলে পড়ি। অনেক কিছু বুঝতাম না। যখন বুঝতে শিখেছি, তখন আর কাজ করা হয়নি। যদি সুযোগ পেতাম, আরও অনেক কিছু শেখা যেত। আমার স্যারের সঙ্গে প্রথম দেখা ‘লাক্স’-এ। তখন আমরা ১০ জন মেয়ে ছিলাম। বলা হয়েছিল, বিজয়ী মেয়েই স্যারের সিনেমায় কাজ করার সুযোগ পাবে। স্যার আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন। সবার হাতে তুলে দিলেন ‘আমার আছে জল’ বইটি। আমি তখন ছিলাম ভীষণ এক্সাইটেড!
হুমায়ূন আহমেদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। পিতা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ, মাতা গৃহিণী আয়েশা ফয়েজ। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।
বাংলা সাহিত্যে নতুন যুগের স্রষ্টা ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। সাহিত্যকে সর্বজনীন পাঠকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে কিংবদন্তি এ কথাশিল্পীর অবদান ইতিহাসে লেখা থাকবে। হিমু, মিসির আলী, রূপা, শুভ্র’র মতো তার নির্মিত চরিত্রগুলো সাহিত্যের কালের যাত্রায় স্থান নিয়েছে। শুধু সাহিত্যেই নয়, নাটক ও সিনেমায় তার নির্মিত কিছু চরিত্রও ছিলো আশ্চর্য রকম জীবন্ত। হুমায়ূন আহমেদের তৈরি করা বিচিত্র সব চরিত্র অগুনতি মানুষকে হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে, স্বপ্নে ভাসিয়েছে। একেকটি চরিত্র পাঠক-দর্শকদের কাছে একেকটি নতুন আবিষ্কার। সাহিত্যের চরিত্রগুলোই বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে তার নাটক-সিনেমায়। হুমায়ূনের গড়া এসব চরিত্রে কখনও কখনও তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের প্রতিরূপ।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪) ও বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করে নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর।