
রাইজিংসিলেট- ৭৫ বছর বয়সে বার্ধক্যের সমস্যার কারণে ৪৮ বছর ইমামতি করে অবসর নিয়েছেন সিরাজুল। অবসরসংক্রান্ত বিদায়ে গত শুক্রবার বাদ জুমা গ্রামবাসী তাকে জমকালো সংবর্ধনা দিয়েছেন।
এ সময় তার হাতে তুলে দেওয়া হয় নগদ টাকা ও নানা উপহারসামগ্রী। পরে মোটরসাইকেল বহরে করে সিরাজুলকে বাড়ি পৌঁছে দেন গ্রামের যুবকেরা। সিরাজুল ইসলাম উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মধ্য তারাকান্দি গ্রামের মৃত মিয়া হোসেনের ছোট ছেলে। ১৯৭৫ সালে কিশোরগঞ্জের তারাকান্দি আকন্দ বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মো. করম আলীর মৃত্যুর পর এলাকাবাসীর আহ্বানে বিনা পয়সায় ইমামতি শুরু করেন মো. সিরাজুল ইসলাম। তারপর কেটে গেল চার দশক।
গ্রামবাসী জানায়, ইমাম সিরাজুল ইসলাম বার্ধক্যের করণে অবসর নিয়েছেন। গ্রামবাসী তাকে না জানিয়েই বিশাল আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তারা চেয়েছিলেন এমন একজন মহৎ ব্যক্তির বিদায় অনুষ্ঠান যেন স্মরণীয় হয়ে থাকে। তাই তারা সুসজ্জিত মঞ্চ করে বিদায় অনুষ্ঠানের অয়োজন করেন। সেখানে নানা বয়সী মানুষ স্মৃতিচারণা করেন।
গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে ইমাম সাহেবকে পবিত্র কোরআন শরিফ, ক্রেস্ট, নগদ টাকা, উপহারসহ নানা উপহারসামগ্রী দেয়া হয়েছে। বিদায় সংবর্ধনা শেষে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাও করা হয়।
এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও মোতোয়ালি মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, সিরাজুল ইসলাম তাদের গ্রামেরই একজন। পরম আপনজন হয়ে ছিলেন। তিনি ছিলেন তাঁর অভিভাবকের মতো।
তারাকান্দি আকন্দ বাড়ির জামে মসজিদের কোষাধ্যক্ষ ফেরদৌস আলম বলেন, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম দীর্ঘ ৪৮ বছর ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রায় ৪০ বছর কোনো বেতন নেননি। ইমামতি থেকে অবসর নেয়ার পর গ্রামবাসী তাকে যা খুশি দিয়েছেন, তিনিও তা না গুনেই নিয়েছেন।
এমন বিদায় সংবর্ধনায় অভিভূত সিরাজুল ইসলাম বলেন, অনেক কম বয়সে মসজিদটির ইমামতি শুরু করেছিলেন। তখন মাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছিল। তাকে যারা ইমামতিতে নিয়েছিলেন, সেসব মুরব্বিরা আজ আর বেঁচে নেই। তবে তাদের সন্তানেরা, গ্রামের অন্যরা তাকে ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন।
তিনি আরও বলেন, তিনি যখন মক্তবে পড়াতেন, তখন আশপাশের গ্রামে এত মসজিদ, মক্তব, মাদরাসা ছিল না। তার ছাত্রছাত্রী কয়েক গ্রামজুড়ে রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, গ্রামবাসী তাকে আরও ইমামতির দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তবে বয়স হয়ে যাওয়ায় নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত তিনি। তাই তার পক্ষে আর দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যক্তিজীবনে তিনি তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ের বাবা।
উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে কামিল পাস করে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার তারাকান্দি ফাজিল মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন মো. সিরাজুল ইসলাম।