সিলেটের রাজপথে হিজরাদের ওপেন চাঁদাবাজী নেই সমাধান !
সিলেট নগরীর রাস্তার পাশে দোকানে, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে, ফুটপাতের দোকানে,বিযের বরের গাড়ি আটক করে জোর করে তারা চাঁদাবাজি করছে। বাসাবাড়ি গিয়ে হিজরারা চাঁদা চাচ্ছেন, টাকা না দিলে হুমকিসহ নানা ধরনের অশ্লীল ভাষা ও অঙ্গভঙ্গি করে এক ধরনের অস্বস্থিকর চাপ সৃষ্টি করে টাকা-পয়সা দিতে বাধ্য করছেন তারা।
হিজরারা বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নামে বিভক্ত হয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করছেন। গেল কয়েক মাস ধরে তাদের মাত্রাতিরিক্ত অসদাচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নগরবাসী।
এমন ঘটনা প্রতিদিন সিলেটের কোথাও না কোথাও ঘটছে। একাধিক সংঘবদ্ধ চক্রের সহযোগীতায় দিনে দুপুরে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে চলে চাঁদাবাজিসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ড। কমিশনের লোভে চক্রের সদস্যরা নগরীর বাসা-বাড়ি ও কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে সহ সামাজিক অনুষ্ঠানের খবর মোবাইলে জানিয়ে দিচ্ছে। খবর পাওয়ার সাথে সাথে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে অনুষ্ঠান স্থলে পৌছে বকশিসের অজুহাতে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির ঘটনা বেড়েই চলেছে। সিএনজি অটোরিকশা চালক, কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন দোকানদার সহ নানা মাধ্যম থেকে মুঠোফোনে সামাজিক অনুষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করে সেখানে উপস্থিত হয় হিজড়ার দল।
সিলেটে হিজড়া প্রতিমাসে নগরের সব ধরণের দোকানে দল বেঁধে হানা দিয়ে মাসিক চাঁদা তুলা অব্যাহত রেখেছে বিভিন্ন গ্রুপের তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা। চাঁদা না পেলে আগত ক্রেতা ও দোকানির সামনে একসাথে সবাই হাতে তালি দিয়ে নিজেদের পড়নের কাপড় খোলার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। ছাড় পাচ্ছেনা রেলে যাতায়াতকারীরা ও ফুটপাতের দোকানদাররাও। পঞ্চাশ কেজি চালের প্লাস্টিকের বস্তা ধরে দুজন সামনে হাটে আর অন্যান্য সদস্যরা কিছু না বলে ফল, সবজি, পেঁয়াজ সহ যা দেখছে দু-চার-ছয়টা করে বস্তায় ভরে চলে যাচ্ছে। চক্ষুলজ্জা ও মানসম্মানের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ বা তাদের প্রতিহত না করায় নির্ভয়ে ইচ্ছে মত লুটতরাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সিলেট শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিয়ের গাড়ির অপেক্ষায় ওঁত পেতে হিজরাদের বসে থাকতে দেখা যায়। গাড়ি বহর দেখামাত্র জীবনের মায়া ত্যাগ করে তারা হুমড়ি খেয়ে সামনে পরে গাড়ি থামাতে বাধ্য করে। এতে করে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও শহরের বাহিরে সিলেটের পর্যটন স্পট বিছানাকান্দি, সাদাপাথর জাফলং এ বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে সেখানেও হিজরারা সক্রিয়। যদিও চাঁদাকে তারা বকশিস বলে প্রচার করে।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে এদের অধিকাংশ ভুয়া ও রূপান্তরিত হিজড়া। প্রতারণা ও চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে হিজড়ার ছদ্মবেশ ধারণ করে অনেকে লাখপতি কেউবা কোটিপতি বনে গেছে। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে অনেকে রূপান্তরিত হয়ে কেউ আবার ছদ্মবেশ ধারণ করে হিজড়া হিসেবে চাঁদাবাজি করছে। শহরে হিজড়াদের ১৫ থেকে ২৫ টি গ্রুপ রয়েছে। প্রত্যেক গ্রুপের নির্দিষ্ট এলাকায় সীমানা ভাগ করা আছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব হিজড়াদের নেতৃত্ব দিচ্ছে রানা হিজড়া, শাহিদা শিকদার হিজরা, সুন্দরী হিজড়া, রাণী মুখার্জী হিজড়া ও কালি হিজড়া সহ নামে বেনামে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা। জানা যায়, ২০১৮ সালে কদমতলীর বহুতল ভবন কুইন্স টাওয়ারে ফ্লাট কিনে বসবাস করছে সুন্দরী হিজড়া। সেখান থেকে সুদের ব্যবসা ও হিজড়াদের প্রায় সব কটি গ্রুপ পরিচালনা করতেন। তবে এখন তার কাছ থেকে অনেক হিজরা চলে গিয়ে গড়ে তুলেছেন নতুন নতুন গ্রুপ। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে সরকার ও বিভিন্ন চ্যারিটি সংগঠন বিভিন্ন সময় উপঢৌকন, প্রণোদনা, আর্থিক সহযোগিতা করার পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেয়। বিগতদিনে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগীতায় সুন্দরী হিজড়ার মাধ্যমে আটটি আধুনিক চটপটি বিক্রির ভ্যান গাড়ী দেয়া হয়। কিছুদিন পর সে গাড়ির হদিস পাওয়া যায় নি। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সুবহানীঘাট থেকে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য তুষার আহমদের লাশ উদ্ধার হয়। তুষারের বড় ভাই হিমেল আহমদ রাফি জানিয়ে ছিলেন,তার ছোটভাই নারী ছদ্মবেশে হিজড়াদের সাথে মিশে চলাফেরা করতো। সে প্রকৃত হিজড়া নয়। টাকার নেশায় তুষারের মত যুবকরা হিজরা সেজে জড়িয়ে পরছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। অভিযোগ আছে, দক্ষিণ সুরমার এক অংশের নেতৃত্বদানকারী রানা হিজড়া প্রকৃতপক্ষে একজন পুরুষ।
সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ বিপিএম (বার)-পিপিএম বলেন, জেলা প্রশাসক ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমন্বয়ে এব্যাপার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। যারা হিজড়া সেজে প্রতারণা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।