
গোয়াইনঘাটে নিষিদ্ধ সব যন্ত্রপাতি দিয়ে পাথর উত্তোলন,পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশ পেলেন যারা !
প্রকৃতি ও মানুষের এমন ক্ষয়ক্ষতি মাথায় রেখে জাফলংকে প্রতিবেশ-সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়ে ছিল।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের পরিবেশ-প্রকৃতি অপরিকল্পিতভাবে বোমা মেশিনসহ নিষিদ্ধ সব যন্ত্রপাতি দিয়ে পাথর উত্তোলনের ফলে বিনষ্ট হচ্ছে ।
গতিপথ বদলে যাওয়া শুরু করেছে পিয়াইন ও ডাউকি নদী। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে চা-বাগান, স্কুল ও ঘরবসতি। মাটির তলদেশ থেকে পাথর তুলতে গিয়ে মাটি ধসে প্রাণহানি ঘটছে শ্রমিকের।
জাফলং ব্রিজের ওপর দাঁড়ালে দেখা যায় উজান-ভাটিতে চোখ রাখলেই চোখে পড়বে বালুবাহী কার্গো নৌকা। উজানের বালু নিয়ে ভাটিতে যাচ্ছে নৌকার বহর। ব্রিজসহ গোটা এলাকাই হচ্ছে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু এই সিন্ডিকেট মানছে না সেই নির্দেশনা। এই সিন্ডিকেট জাফলংয়ের ইসিএ জোন থেকে বালু লুটের মহোৎসবে মেতে উঠেছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন- প্রতিদিন জাফলংয়ের চা-বাগানের এলাকা থেকে শুরু করে ভাটিতে বাংলাবাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা থেকে ৩০-৩৫ লাখ টাকার বালু লুটপাট করা হচ্ছে। এর আগে কয়েকবার জাফলং এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবরে ডাউকী নদীতে অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিচালিত অভিযানে মেশিন ধ্বংস করা হয় এবং বালুবাহী নৌযান আটক করে জরিমানা আদায় করা হয়। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে আসার পর জাফলংয়ের চিত্র যেই লাউ সেই কদুর মত ।অভিযান দিয়ে আসার পরে বেড়ে যায় লুটপাট ।
সরকারের বালুমহাল নয়, এমন এলাকা থেকেও ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বা স্থাপনাও ক্ষতির সম্মুখীন। পরিবেশের ক্ষতি করার জন্য গোয়াইনঘাটের ১০ জন পরিবেশের ক্ষতি কারীর বিরুদ্ধে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর জবাব প্রদানের জন্য নোটিশ জারি করে।
নোটিশে উল্লেখ্য যে, উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং-ডাউকি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ECA)’য় আপনারা সরকারি অনুমোদন গ্রহণ ব্যতিরেকে বেআইনীভাবে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু ও পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করছেন মর্মে এ দপ্তরের এনফোর্সমেসন্ট টীম কর্তৃক তথ্য পায়। বিবাদীগণ প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ECA)’য় যান্ত্রিক উপায়ে বালু ও পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে ডাউকি ও পিয়াইন নদী এবং নদী সংলগ্ন এলাকার ক্ষতিসাধন, ভূমির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট পরিবর্তন/শ্রেণী রূপান্তর করছেন, যা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী বেআইনী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমতাবস্থায়, উপরোল্লিখিত অপরাধের জন্য বর্ণিত আইন ও বিধিমালা লংঘনের দায়ে কেন আপনি/সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আরোপ/পরিবেশ আদালত কিংবা স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়েরসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার ব্যাখ্যা আগামী ১৯/০৯/২০২৩ তারিখে সকাল ১০:০০ ঘটিকায় নিম্নস্বাক্ষরকারীর দপ্তরে হাজির হয়ে প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
ব্যর্থতায় একতরফা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।দিনের চেয়ে রাতের বেলা বেশি সংখ্যক ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করা হয়। ফলে রাতে মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। পাথরখেকোদের দাপটের কারণে ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না জাফলং বাগানের খাসিয়ারা ও কান্দুবস্তির বাসিন্দারা।
নোটিশ প্রাপ্যরা হলেন,
১। জনাব সামসুল আলম, পিতা: ইদ্রিস আলী, সাং: আসামপাড়া, পোস্ট: জাফলং, উপজেলা: গোয়াইনঘাট, জেলা সিলেট।
২। জনাব আলিম উদ্দিন, পিতা। ইনছান আলী, সাং নয়াবস্তি পোস্টঃ জাফলং, উপজেলাঃ গোয়াইনঘাট, জেলা: সিলেট।
৩। জনাব ফিরোজ আহমদ, পিতাঃ মস্তফা মিয়া, সাং কালুবন্তি, পোস্ট: জাফলং, উপজেলা: গোয়াইনঘাট, জেলা: সিলেট
৪। জনাব ছাবেদ মিয়া, সাং নয়াবস্তি, পোস্ট: জাফলং, উপজেলা: গোয়াইনঘাট, জেলা: সিলেট।
৫। জনাব ইমরান হোসেন সুমন, সাং। মামার বাজার, পোস্ট: জাফলং, উপজেলা: গোয়াইনঘাট, জেলা: সিলেট।
৬। জনাব আতাউর রহমান আতাই, পিতা: মৃত আবুল খায়ের কটাই মিয়া, সাংঃ নয়াবস্তি, পোস্ট: জাফলং, উপজেলা: গোয়াইনঘাট, জেলাঃ সিলেট।
৭। জনাব ফয়জুল ইসলাম, উপজেলা ছাতক, জেলা: সুনামগঞ্জ।
৮। জনাব ছাবেদ মিয়া, পিতাঃ মৃত মন্তজির আলী পাখি মিয়া, সাং নয়াবস্তি, পোস্ট: জাফলং, উপজেলা: গোয়াইনঘাট, জেলাঃ সিলেট।
৯। জনাব সাবু মিয়া, পিতাঃ ফজলু মিয়া, সাং-নয়াবস্তি, পোস্ট: জাফলং, উপজেলাঃ গোয়াইনঘাট, জেলাঃ সিলেট।
১০। জনাব রহমত মিয়া, সাং নয়াবন্তি, পোস্ট। জাফলং, উপজেলা: গোয়াইনঘাট, জেলাঃ সিলেট।