
রাইজিংসিলেট- ক্যালেন্ডার বদলে এসে গেছে নতুন বছর ২০২৪। পশ্চিমা সংস্কৃতির হাত ধরে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের রীতি আসলেও ইসলামে এটি পালনের সম্মতি নেই। আরবি মাস অনুযায়ী, মুসলমানদের নতুন বছর শুরু হয় মুহররম মাস থেকে। এই সময়েও উদযাপনে বিধি-নিষেধের কথা বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। তবে নতুন বছরে কল্যাণ, সাফল্য কিংবা অতীতের গুনাহ থেকে পানাহ চেয়ে দোয়া করায় বাধা নেই।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু যারা তওবা করে, নিজেদের সংশোধন করে, আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে এবং আল্লাহর উদ্দেশে তাদের দীনে একনিষ্ঠ থাকে, তারা মুমিনদের সঙ্গে থাকবে এবং মুমিনদের আল্লাহ অবশ্যই মহা পুরস্কার দেবেন।’ (সুরা নিসা: ১৪৬) সুতরাং, অতীতের ভুল-ত্রুটি থেকে তওবা করে নতুন বছরে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও ইমান-আমলের পাশাপাশি সাফল্য কামনায় দোয়া করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কিছু দোয়া নিচে তুলে ধরা হলো:
আহমাদ ইবন মানী (রহ.)… শাকল ইবন হুমায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললাম- ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি আমাকে পানাহ চাওয়ার একটি দোয়া শিখিয়ে দিন যা দ্বারা আমি পানাহ চাইব। তিনি তখন আমার হাত ধরে বললেন, বলো:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন সাররি সাময়ি, ওয়া-মিন সাররি বাসারি, ওয়া-মিন সাররি-লিসানি, ওয়া-মিন সাররি কালবি, ওয়া-মিন সাররি মানিইয়ি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি পানাহ চাই তোমার কাছে আমার কানের অনিষ্ট থেকে, চোখের অনিষ্ট থেকে, জিহ্বার অনিষ্ট থেকে, আমার হৃদয়ের অনিষ্ট থেকে এবং গোপনীয় অঙ্গের অনিষ্ট থেকে। (তিরমিজী: ৩৪৯২, মিশকাত ২৪৭২)
এছাড়াও নতুন বছরে অক্ষমতা, অলসতা দূর করতেও মহান রবের নিটক দোয়া করতে পারেন। হাদিসে এসেছে, আবু বকর ইবনু নাফি আবদী (রহ.)… আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেন:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْكَسَلِ وَأَرْذَلِ الْعُمُرِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ وَفِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়াল-কাসালি ওয়া-আরদালিল উমুরি, ওয়া-আযাবিল কাবরি, ওয়া-ফিতনাতিল-মাখইয়া ওয়াল-মাম্মাতি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কৃপণতা, অলসতা, বয়সের নিকৃষ্টতম সময় (বার্ধক্যের দৈন্য), কবরের আযাব এবং জীবন ও মৃত্যুর দুর্যোগ থেকে আশ্রয় চাই।
তবে সর্বাবস্থায় সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার পড়ার কথাও এসেছে বিভিন্ন হাদিসে। আবূ মা’মার (রহ.)… শাদ্দাদ ইবনু আউস (রা.) থেকে বর্ণিত- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দোয়া পড়া- ‘হে আল্লাহ তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ, তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারণ, তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।
সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার:
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া-আনা আ’লা আহ্দিকা ওয়া-ওয়াদিকা মাসতাততু, আউযুবিকা মিন শার্রি মা ছানাতু, আবূউলাকা বিনিইমাতিকা আ’লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্ফির্লি ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা।
যে ব্যক্তি দিনের (সকাল) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইস্তিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই যদি সে মারা যায়, সে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতের (প্রথম) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দোয়া পড়ে নেবে, সে যদি ভোর হওয়ার আগেই মারা যায় তবে সে জান্নাতি হবে। (সহীহ বুখারী: ৫৮৬৭)
এর বাইরেও সব অকল্যাণ থেকে বাঁচতে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তে পারেন। হাম্মদ ইবনু বাশশার (রহ.)… উছমান ইবনু আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় যে বান্দা তিনবার নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করবে, কোনোকিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না। দোয়াটি হলো-
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মায়াসমিহি সাইইন, ফিল-আরদি ওলা ফিস-সামায়ি, ওহুয়াস-সামিয়ুন আলিম।
অর্থ: আল্লাহর নাম নিচ্ছি। জমিন ও আসমানের কোনোকিছুই যাঁর নামে বরকতের ক্ষতি সাধন করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (তিরমিজী: ৩৩৮৮, ইবনু মাজাহ: ৩৮৬৯)
মহান আল্লাহ আমাদের ইহকাল ও পরকালে সফল হওয়ার তওফিক দান করুন, আমিন।